ডায়েট কি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে? ডায়েট ও মানসিক স্বাস্থ্য—এ দুইয়ের যোগসূত্র খুঁজতে সম্প্রতি কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, খাদ্য অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। আর তাই সুস্থ থাকতে খাদ্যতালিকায় আনছে পরিবর্তন। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তাই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খাদ্যের প্রভাব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে এখন। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও জনসাধারণের কাছে রীতিমতো মনোযোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গবেষকরা খাদ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিদ্যমান গবেষণাগুলো পর্যালোচনা করেছেন। পর্যালোচনায় বের হয়ে আসা অনুসন্ধানগুলো ইউরোপের নিউরোফার্মাকোলজি জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে বলা হচ্ছে, ডায়েট মানুষের মুড পরিবর্তন করতে পারে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, আমাদের মস্তিষ্কের কাজ করার জন্য পুষ্টির দরকার। আমরা যে খাবারগুলো খাই, সেগুলো আমাদের মুড ও জ্ঞানের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া দেহের অন্যান্য অংশ যেমন অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া, হরমোন, নিউরোপেপটাইডস ও নিউরোট্রান্সমিটারে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
কয়েক বছর ধরে মেডিটেরিয়ান ডায়েট আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, এ ধরনের ডায়েট মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। মেডিটেরিয়ান ডায়েটে মাছ, হাঁস, অলিভ অয়েল, মটরশুঁটি এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যজাতীয় খাদ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ধরনের ডায়েট ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, ভিটামিন ‘বি’-এর ঘাটতির কারণে অবসাদ, ক্লান্তি, মানসিক চাপ, হতাশা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সমস্যা দেখা দেয়। এ ভিটামিনের অভাবে ম্যানিয়া কিংবা সাইকোসিসের সমস্যায়ও মানুষ ভুগতে থাকে। ভিটামিন ‘বি-১২’ মানবশরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এ ভিটামিনের অভাবে স্নায়বিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে ভিটামিন ‘বি-১২’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার।
ম্যানিয়া কিংবা সাইকোসিস এসব রোগে ভোগা মানুষের মানসিক বিকাশ সাধনে ভিটামিন ‘বি-১২’ যুক্ত খাবার ভূমিকা রাখে। এজন্য ডায়েট চার্টে অবশ্যই ‘বি-১২’ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, মুরগি এগুলো ভিটামিন ‘বি-১২’ যুক্ত খাবার। কম চর্বিযুক্ত দইও ‘বি-১২’ সরবরাহ করে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, আমাদের শরীরে প্রতিদিন ২ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘বি-১২’ দরকার। তবে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে পরিমাণটি একটু বেশি। জন্মের পর শিশুর মানসিক বিকাশ যাতে সাবলীলভাবে ঘটে, তাই গর্ভাবস্তায় ভিটামিন ‘বি-১২’ যুক্ত খাবার খেতে বলেন চিকিৎসকরা।
আরো কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘ডি’ প্রাপ্তবয়স্কদের কাজের স্মৃতি ও মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে। অন্য বেশ কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিটামিন ‘ডি’ হতাশার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কাজেই চিকিৎসকরা খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন। ডিমের কুসুম, মাখন, দুধ, যকৃৎ, তৈলাক্ত ও সামুদ্রিক মাছ—এগুলো ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার। কমলার জুসেও ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। তবে বাজারে বিক্রি করা জুসের পরিবর্তে আস্ত কমলা কিনে বাড়িতে জুস তৈরি করে খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। ভিটামিন ‘ডি’-এর একটি বড় উৎস হলো সকালের মিষ্টি রোদ। ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়ম করে সকালে রোদে একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।