Connect with us

নির্বাচিত

পরোক্ষ ধূমপানে অসুস্থ ৬১ হাজার শিশু, কঠোর আইনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

Published

on

দেশে ১৫ বছরের নিচে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। এই ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত ও কঠোরভাবে সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তরুণ চিকিৎসকরা।

তাদের মতে, জনসমাগমস্থল ও পরিবহন থেকে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান তুলে না দিলে শিশু ও তরুণ প্রজন্মকে তামাকের মারাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

আজ (বুধবার) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা : তরুণ চিকিৎসকদের করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে চিকিৎসকরা এই আহ্বান জানান।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন। তিনি বলেন, “গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছেলেদের ৯.২ শতাংশ এবং মেয়েদের ২.৮ শতাংশ ধূমপান করে। আরও উদ্বেগজনক হলো—বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী ঘরে বা পাবলিক স্থানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।”

তিনি যোগ করেন, “তামাক কোম্পানিগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে তরুণদের লক্ষ্য করে আগ্রাসী বিপণন চালাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নেশার চক্রে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিকল্প নেই।”

Advertisement

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “তামাক এমন এক নীরব ঘাতক, যা প্রতিদিন শত শত প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। শুধু ধূমপায়ী নয়, আশপাশের নিরীহ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বিপদ ঠেকাতে আইনকে শক্ত করতে হবে।”

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “দেশে ১৫ বছরের নিচে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত। তাই পাবলিক স্থানে ‘ধূমপানের নির্ধারিত স্থান’ পুরোপুরি তুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। তামাক কোম্পানির তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিও বন্ধ করতে হবে, যা তরুণদের ধূমপানে প্রলুব্ধ করে।”

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, “তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর দেশে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে দ্রুত আইনি সংস্কার জরুরি। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষাই এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

সেমিনারে বক্তারা এফসিটিসি অনুযায়ী ছয়টি নীতিগত প্রস্তাব পেশ করেন—
১. সব পাবলিক স্থানে ও পরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল করা।
২. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
৩. তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ করা।
৪. শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া।
৫. তামাকপণ্যের খোলা ও খুচরা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।
৬. স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি।

Advertisement

চিকিৎসকদের অভিমত— শিশুদের ধোঁয়ার মধ্যে বড় হতে দেওয়া মানে একটি জাতির ভবিষ্যৎকে বিষাক্ত করা। এখনই সময়, তামাকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

Continue Reading
Advertisement