ডা. মো. ফারুক হোসেন
নানাবিধ রোগের মধ্যে মুখে আলসার আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম। মুখে আলসারের কারণে অনেকেই মুখরোচক খাবার খেতে পারেন না। মুখের আলসারের রোগীদের কেউ কেউ এমনও অভিযোগ করেন, পানি পান করার সময়ও মুখে জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। তাই মুখের আলসারের রোগীদের খাদ্য গ্রহণ, বিশেষ করে ইফতার ও সেহেরির সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ক্ষুদ্রান্ত্রের রোগের কারণে অনেকেরই মুখে আলসার বা ঘা দেখা দিতে পারে। অনেকেরই মাত্রার অধিক প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে মুখের আলসারের তীব্রতা বেড়ে যায়। যাদের গ্লুটেন ইনটলারেন্স রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গ্লুটেন ফ্রি খাবার বা ইফতার গ্রহণ করা জরুরি। সম্ভব না হলে খাবার গ্রহণের পরিমাণ অবশ্যই কমাতে হবে। ওরাল আলসারের রোগীদের অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজাপোড়া জাতীয় ইফতার পরিহার করা উচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ওরাল আলসারের রোগীদের সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবারও খেতে হবে রয়েসয়ে। গতানুগতিক ইফতার সামগ্রী পরিহার করে ওরাল আলসারের রোগীদের ফল দিয়ে ইফতার করা ভালো। বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা উচিত। সম্ভব হলে ফ্রিজের পানি পরিহার করা ভালো। শরবতের ক্ষেত্রে কৃত্রিমতা পরিহার করে বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই ডায়েট কোলা বা তথাকথিত শীতল পানীয় দ্বারা ইফতার করা যাবে না। ওরাল আলসার রোগীদের পাকা পেঁপে, শসা, কলা ইত্যাদি খাবার দিয়ে ইফতার করা ভালো। কোনো খাবারে এলার্জি থাকলে তা বাদ দিতে হবে।
ওরাল আলসারের রোগীদের রোজার মাসে কিছু ওষুধ পরিহার করা উচিত। ওরাল আলসারের রোগীদের সব ওষুধ এ মাসে সেবন করা যাবে না রোজা রাখার ক্ষেত্রে। অন্যথায় দিনের বেলায় রোজা থাকা অবস্থায় বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। স্থানীয়ভাবে প্রয়োগকারী কিছু অয়েন্টমেন্ট রোজার সময় ব্যবহার করতে হবে সাবধানে। কারণ কিছু মলম জাতীয় ওষুধ প্রয়োগের পর দানাকারে গলার অভ্যন্তরে চলে যেতে পারে অনিচ্ছাকৃতভাবে। তাই এসব ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রাতের খাবার এবং সেহেরির সময় সবজি ও মাছসমৃদ্ধ তরকারি ভাতের সঙ্গে খাওয়া ভালো। মাংস জাতীয় খাবার ও ভুনা তরকারি যথাসম্ভব কম খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম পালন করতে হবে সারা বছরের মতো। ওরাল আলসারের রোগীদের রাতের বেলায় টুথব্রাশ করার সময় প্রচলিত টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। সোডিয়াম লরিল সালফেট বা এসএলএস যুক্ত কোনো টুথপেস্টই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ টুথপেস্টের এসএলএস মুখে আলসারের তীব্রতা অনেক বৃদ্ধি করে আর রমজান মাসে তা আরো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। ইফতারের সময় মুড়ি খাওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে মুড়ি যেন ইউরিয়া সার প্রক্রিয়াজাত না হয়। অন্যথায় মুখের আলসারসহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করবে।
শরবতের ক্ষেত্রে গুড়ের শরবত পরিহার করাই ভালো। কারণ গুড়ের মধ্যে ক্ষতিকর হাইড্রোজ নামক উপাদান মেশানো হয়ে থাকে গুড়ের রঙ সুন্দর দেখানোর জন্য। যেহেতু সর্বসাধারণের জন্য হাইড্রোজমুক্ত গুড় নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তাই গুড় খাদ্য তালিকায় না রাখাই ভালো। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে ওরাল আলসার শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই বলে পুষ্টিকর খাবার বাদ দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
তবে সার্বিকভাবে রমজান মাস ওরাল আলসারের রোগীদের জন্য খুবই ভালো। সবার জন্য তো বটেই। নামাজ মেডিটেশনের মতো কাজ করে। দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার কারণে অনেকেরই মুখের অভ্যন্তরে আলসারের সৃষ্টি হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। রোজার মাসে নামাজ ও রোজা মানবদেহে, বিশেষভাবে মনে স্থিরতা সৃষ্টি করে। মানসিক প্রশান্তির কারণে ওরাল আলসারের তীব্রতা অবশ্যই কমে আসবে, বিশেষ করে যেসব ওরাল আলসারের কারণ সহজে নির্ণয় করা যায় না।
লেখক: ডা. মো. ফারুক হোসেন
ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন