সেহরি ও ইফতারে খাওয়া নিয়ে একটা হুলস্থুল পড়ে যায়। ব্যাগভর্তি করে বাজার করে আনছে সবাই। পছন্দের খাবারটি খেতে ইচ্ছে করে, বিশেষ করে সেহরিতে। সারা দিনের শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে হয়। সঙ্গে পুষ্টির কথাটিও বিবেচনা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, সেহরিতে হালকা ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। জানান পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীর।
সেহরিতে তেল-মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়া ভালো। সাধারণত যে ধরনের খাবার খাওয়া হয়, তা-ই খাবেন। একটু ঝোলযুক্ত খাবার থাকলে পানির ঘাটতিটা কিছুটা পূরণ হবে। ভাত, মাছ, ডাল খেতে পারেন। এতে যেকোনো সবজির একটি পদ থাকতে পারে। যাঁরা রুটি খেতে অভ্যস্ত, তাঁরা রুটি খেতে পারেন। চাইলে পাউরুটি ও দুধ খেতে পারেন। তবে খাওয়া শেষে মিষ্টিজাতীয় কোনো পদ খেলে সারা দিনের শক্তি বজায় থাকবে। ডেজার্ট হিসেবে না খেতে চাইলে ওসব খেয়েই রোজা রাখতে পারেন। এটা নির্ভর করছে আপনার শারীরিক ক্ষমতার ওপর। পুডিং, দুধ সেমাই, ফিরনি, পায়েস, কাস্টার্ড খেতে পারেন। তবে গর্ভবতী মেয়েরা খাওয়ার পর এক গ্লাস দুধ খেতে ভুলবেন না। ভারী ধরনের খাবার খেলে শরীরে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। খাওয়ার পর অনেকের চা ও কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে—তাও খেতে পারেন। তবে খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে শোবেন না। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর ঘুমোতে যান। কেউ কেউ সারা দিনের পানি একবারেই খেয়ে ফেলতে চান। এটিও ঠিক নয়। প্রয়োজনের থেকে সামান্য পরিমাণ পানি বেশি খান। অতিরিক্ত পানি খাওয়া ঠিক নয়। যাঁদের ডায়বেটিস আছে তাঁরা ফলমূল খাবেন। এতে পুষ্টি ঠিক থাকবে। কেননা তাঁরা তো মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারছেন না। এ ছাড়া তেলেভাজা খাবার, কাবাব-পরোটা এড়িয়ে যাওয়া ভালো। বলেন সিদ্দিকা কবীর।
সেহরি খেলে অনেকের শরীর ভারী লাগে। সে জন্য তাঁরা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেন, যা ঠিক নয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। জানান বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার আলো।
সেহরিতে অবশ্যই আমিষ আর শস্যজাতীয় খাবার রাখা উচিত। আগের খাবারকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারেন। অন্য সময়ের দুপুরের খাবারটা খাবেন সেহরিতে, সকালের নাশতা ইফতারে এবং রাতের খাবার আগের মতোই খাবেন। মাছ, মাংস পরিমিত পরিমাণে খাবেন। তবে মাংস বা ডিম সবই একসঙ্গে খাবেন না। শাক না খাওয়াই ভালো। হজমে অসুবিধা হতে পারে। তা ছাড়া সেহরিতে খাবার খাওয়ার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায় না। সে কারণে চটজলদি খাওয়া যায়—এমন খাবারই খেতে হবে। খেয়াল রাখবেন, খাবারের পদে সব ধরনের খাদ্যের উপাদান যেন থাকে। ফল, সবজি, দুধ কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে খাদ্য গুণাগুণ আছে—এমন খাবার খেতেই হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা পরিমিত পরিমাণে খাবেন। যেহেতু ঘুম থেকে উঠে খেতে হয়, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় রুচি থাকে না। তবে একটু হলেও খাবেন। কখনোই না খেয়ে রোজা থাকবেন না। এতে পরবর্তী সময় অপুষ্টিতে ভুগবেন। একই ধরনের খাবার খেলে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। রান্নার পদে পরিবর্তন আনতে পারেন। এতে খেতে ভালো লাগবে। তবে বাসি খাবার খাবেন না।