ফারহানা ইমা
রমজানে দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায় হঠাৎ করেই। এ সময় খাদ্য তালিকা নিয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন প্রত্যেকেরই। না হলে হঠাৎ অনিয়মে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
অনেকেই মনে করেন রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি মোটেও ঠিক নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে রমজানেও আপনি থাকবেন সুস্থ। প্রতিদিনের সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারের মধ্যে থাকা চাই সঠিক সমন্বয়। জেনে নিন রোজার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে। জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ রেহানা ফেরদৌসী মিলি।
সেহরি : সেহরি খাওয়ার পর অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত কিছু খাওয়া হয় না। তাই সেহরির খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে শক্তি বজায় রাখে। ফলে সারাদিন না খাওয়ার ফলে শরীর খুব একটা দুর্বল হয়ে পড়ে না। এছাড়া শর্করা জাতীয় খাবারের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে মাছ-মাংস এবং দুধ খেতে হবে। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাংসের পরিবর্তে মাছ বা সবজি বেশি করে খেতে হবে। আঁশ জাতীয় খাবারগুলোও বেছে নিতে হবে। সেহরিতে ভাতের পরিবর্তে রুটিও খাওয়া যেতে পারে। যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে তেল বা মসলা জাতীয় খাবারগুলো কম খাওয়া উচিত। নয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা বেশি করে সবজি বা ঝোল জাতীয় তরকারি খেতে পারেন।
ইফতার
ইফতারে সাধারণত তেলে ভাজা খাবারের পরিমাণটাই বেশি থাকে। কিন্তু এ ভাজাপোড়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয়। তাই ইফতারে ভাজাপোড়ার পরিমাণ যতটা সম্ভব কমিয়ে দেওয়া উচিত। সে সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, খাবারটা যেন পোড়া তেল দিয়ে ভাজা না হয়। পোড়া তেল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইফতারের খাবারে পটাসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে প্রচুর। খেজুরের মধ্যে এ দুটো উপাদানই প্রচুর বিদ্যমান। তাই ইফতারির মেন্যুতে খেজুরটা অবশ্যই রাখা উচিত। যেহেতু সারাদিন পানি পান করা হয় না সেহেতু ইফতারিতে যথেষ্ট পানি পান করা প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন পানীয় বা আঁশ জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেহেতু প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রোজা রাখতে হচ্ছে সেহেতু শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ইফতারির মেনুতে রাখতে পারেন ঠাণ্ডা শরবত। ডাবের পানিও সারাদিনের ক্লান্তি দূর করবে। এছাড়া যারা প্রেসারের রোগী তারা গুড় এবং চিড়ার তৈরি শরবত খেতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা গুড়ের পরিবর্তে টক দই এবং চিড়া দিয়ে তৈরি শরবত খেতে পারেন। ঝাল জাতীয় খাবার বা যে কোনো সস এ সময় না খাওয়াই ভালো। মোট কথা, খাবারে সুষম উপাদানগুলো পূরণ হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেকেই ইফতারির পর রাতের খাবার খেতে চান না। সেক্ষেত্রে সেহরি বা ইফতারিতে যদি খাবারের ছয়টি উপাদানই পর্যাপ্ত পরিমাণে পূরণ হয়ে থাকে তবে রাতের খাবার না খেলেও চলবে। রোজাদারদের ক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু সারাদিন পানি পান করা হয় না, তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত যতটা সম্ভব পানি পান করা উচিত। নয়তো এ গরমে পানিশূন্যতা হতে পারে।
রোজার একটি মাস নিয়ম মেনে চললে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা খুব একটা থাকে না এবং সারাদিন রোজা রাখতেও খুব একটা কষ্ট হয় না। তাই রোজার সময়টায় সুস্থ থাকার জন্য আমাদের নিয়মমাফিক সুষম খাবার খেতে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।