Connect with us

বিবিধ

অ্যান্ড্রোপজ পুরুষত্বের সংকট

ডা: এ.আর.এম. সাইফুদ্দীন একরামবয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হতে থাকে। মেয়েদের নিয়মিত রজঃস্রাবের জন্য দায়ী যেসব হরমোন, সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে তা কমে যায় এবং রজঃনিবৃত্তি ঘটে। ইংরেজিতে একে মেনোপজ (গবহড়ঢ়ধঁংব) বলা হয়। পুরুষের বেলায় পুরুষত্বের জন্য দায়ী হরমোনের মাত্রা এভাবে কমে না। কিন্তু ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমতে […]

Published

on

ডা: এ.আর.এম. সাইফুদ্দীন একরাম
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হতে থাকে। মেয়েদের নিয়মিত রজঃস্রাবের জন্য দায়ী যেসব হরমোন, সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে তা কমে যায় এবং রজঃনিবৃত্তি ঘটে। ইংরেজিতে একে মেনোপজ (গবহড়ঢ়ধঁংব) বলা হয়। পুরুষের বেলায় পুরুষত্বের জন্য দায়ী হরমোনের মাত্রা এভাবে কমে না। কিন্তু ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমতে থাকে এবং এই পরিবর্তন কয়েক বছর ধরে চলে। একপর্যায়ে পুরুষত্বের অনেক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়। এক কথায় একে পুরুষের মেনোপজ বলা যায়। অধিকাংশ চিকিৎসাবিজ্ঞানী পুরুষত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো লোপ পাওয়াকে অ্যান্ড্রোপজ (অহফৎড়ঢ়ধঁংব) বলে থাকেন।
পুরুষত্বের জন্য দায়ী মূল হরমোন টেসটোস্টেরন। টেসটোস্টেরন শরীরে কমে যাওয়ার কারণে অ্যান্ড্রোপজ হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে মেনোপজ বা রজঃস্রাব নিবৃত্তি হলে ডিম্বস্ফোটন (ঙাঁষধঃরড়হ) বন্ধ হয়ে যায় এবং নিয়মিত মাসিক রজঃস্রাব হয় না। এ পরিবর্তনগুলো খুবই দৃশ্যমান। পাশাপাশি রজঃনিবৃত্তির জন্য মহিলাদের নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। অনেক মহিলা রজঃনিবৃত্তিতে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন তীব্রভাবে অনুভব করেন; এমনকি এ জন্য তারা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য হন। আবার অনেকে এসব পরিবর্তন তেমন আমলে নেন না এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। পক্ষান্তরে পুরুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে টেসটোস্টেরনের ঘাটতির ফলাফল সহজে তেমন দৃশ্যমান হয় না। এ জন্য অ্যান্ড্রোপজ কখন ঘটে যায় তা অনেক পুরুষই উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু টেসটোস্টেরন হরমোনের অভাবে পুরুষের যৌনচাহিদা, মানসিক শক্তি ইত্যাদি ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে। এসব পরিবর্তন সবার অগোচরে ঘটে বিধায় অনেক সময় তা সরাসরি দৃশ্যমান হয় না। ব্যক্তিবিশেষে পুরুষের শরীরে টেসটোস্টেরন মাত্রার ব্যাপক ভিন্নতা দেখা যায়। কম বয়সী যুবকের চেয়ে স্বাভাবিকভাবে বয়স্ক পুরুষের শরীরে টেসটোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে। বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমতে শুরু করে। গড়পড়তা ৩০ বছর বয়স হওয়ার পর এর মাত্রা প্রতিবছর ১ ভাগ করে কমে; সাধারণত ৭০ বছর বয়সী পুরুষের শরীরে এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কমে যায়। কারও কারও এ মাত্রা আরও কমে যেতে পারে। স্বভাবত একজন পুরুষের শরীরে টেসটোস্টেরনের মাত্রা বয়স বাড়ার জন্য কমেছে; নাকি অন্য কোন রোগব্যাধির কারণে কমেছে তা মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে অনেক কারণেই টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়; যেমন নিদ্রাকালীন শ্বাস আবদ্ধতা (ঙনংঃৎঁপঃরাব ংষববঢ় ধঢ়হবধ)।
একটা প্রশ্ন সবার মনেই জাগতে পারে। কেমন করে বুঝব শরীরে টেসটোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমেছে? সাধারণত অনেক পুরুষের শরীরে টেসটোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলেও তেমন কোন লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পায় না। আবার অনেকের নানা রকম লক্ষণ-উপসর্গ দেখা যায়। যেমন :
ষপুরুষের স্বাভাবিক যৌনতার পরিবর্তন। সাধারণত টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষের যৌনচাহিদা হ্রাস পায়; এমনকি নপুংসকতা দেখা দিতে পারে। অনেকের অণ্ডকোষ দুটি আকারে-আকৃতিতে ছোট হয়ে যায় এবং যৌনদুর্বলতা দেখা দেয়।
ঘুমের পরিবর্তন : টেসটোস্টেরন কমে যাওয়ার ফলে অনেক পুরুষের ঘুমের ধরন বদলে যায়। আবার অনেকে নিদ্রাহীনতায় ভুগতে পারেন।
শারীরিক পরিবর্তন : টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমার ফলে পুরুষের শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন শরীরে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়, পেশির পরিমাণ কমে যায় এবং ভারী শারীরিক কসরত করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এছাড়া হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। অনেক পুরুষের স্তন বৃদ্ধি ঘটে এবং তা ব্যথাযুক্ত হতে পারে। অনেকের মাথার চুল পড়ে যায় এবং টাক দেখা যায়। এছাড়া শারীরিক শক্তি ও উদ্দীপনা ব্যাপকভাবে কমে যায় এবং কেউ কেউ হঠাৎ হঠাৎ শরীরে উত্তাপের ঝলক সৃষ্টি হয় বলে অনুভব করে থাকেন।
মানসিক পরিবর্তন : টেসটোস্টেরনের পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের কর্মস্পৃহা অনেক কমে যায়। কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি অনেকে আÍবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। যৌবনের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, মনের জোর, সব জয় করার এক উদগ্র বাসনা তা টেসটোস্টেরনের পরিমাণ কমার ফলে কোথায় যেন উবে যায়! কোন কাজে একভাবে মনোসংযোগ করা যায় না, স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে; এমনকি অনেকে বিভিন্ন মাত্রার বিষণœতায় ভুগতে পারেন।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বয়স বাড়ার ফলে এসব শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবেই ঘটতে পারে। তবে অনেক সময় অন্যান্য শারীরিক অসুখ-বিসুখ, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, বিষণœতা রোগ, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি কিংবা ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এ রকম হতে পারে। সুতরাং একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত।
মহিলাদের রজঃনিবৃত্তি কোনো রোগ নয়; এটা জীবনের একটি স্বাভাবিক অমোঘ পরিবর্তন। একদিন কিশোরী যেমন রজঃস্রাব শুরুর মাধ্যমে নারীতে পরিণত হন, তেমনি রজঃনিবৃত্তির মাধ্যমে তিনি জীবনে প্রৌঢ়ত্বের অন্য এক স্তরে উপনীত হন। নারীজীবনে রজঃস্রাব শুরু হওয়া যেমন কোন অসুখ নয়, রজঃস্রাবের নিবৃত্তিও তেমন কোন ব্যাধি নয়। একই ধারাবাহিকতায় পুরুষের পরিণত বয়সে টেসটোস্টেরন কমে যাওয়ার ফলে পুরুষত্বের ইতি ঘটে, যাকে অ্যান্ড্রোপজ বলে তা-ও কোন অসুখ নয়। জীবনের একটি পরিবর্তিত ধাপ বা পর্যায়। এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে জীবনের এই নতুন পর্যায়টিকে উপভোগ করা এবং আনন্দমুখর করে তোলা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে এ পরিবর্তন সম্পর্কে কোন সংশয় থাকলে কিংবা টেসটোস্টেরন কমে যাওয়া নিয়ে কোন সন্দেহ থাকলে, অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শেষ বয়সে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আবার টেসটোস্টেরন তৈরি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে কতগুলো বিষয় খেয়াল রাখা উপকারীÑ
চিকিৎসকের সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলা উপকারী। সমস্যাগুলো যদি বয়স বাড়ার কারণে না হয়ে অন্য কোন অসুখ-বিসুখ কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হয়, তাহলে সেটার সমাধান করা যেতে পারে।
জীবনাচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমনÑ স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা উচিত। সুস্থ জীবনাচরণ শারীরিক শক্তি ও মানসিক উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
বিষণœতার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। আগেই বলা হয়েছে টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষের কর্মস্পৃহা, মানসিক উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেক হ্রাস পায়। এছাড়া বিষণœতার কারণে অনেকের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, নিঃসঙ্গ থাকতে পছন্দ করেন এবং সামাজিক কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত কাজ করার প্রবণতা, অতিরিক্ত নেশা করা কিংবা বিপজ্জনক কাজকর্ম করাও বিষণœতার কারণে হতে পারে। বনজ ওষুধ সেবনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এটা খুবই পরিষ্কার যে, বয়স বাড়ার ফলে টেসটোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে তা গাছ-গাছড়ার পাতা-রস খেয়ে বাড়ানো যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বনজ ওষুধের কার্যকারিতার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং এগুলো সেবন করলে যকৃৎ কিংবা কিডনি নষ্ট হওয়ার আশংকা থেকে যায়। অনেকে কৃত্রিম উপায়ে টেসটোস্টেরন-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। এর কার্যকারিতা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রোস্টেটের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অতএব একজন উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ রকম ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

লেখক : ডা: এ.আর.এম. সাইফুদ্দীন একরাম
অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান
মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন4 weeks ago

ওষুধ খাওয়ার ভুলে অসুস্থতা

জ্বর বা মাথাব্যথা হলেই প্যারাসিটামল, অ্যালার্জির জন্য হিস্টাসিন কিংবা গ্যাসের ট্যাবলেট- এই ধরনের ওষুধগুলো আমরা হরহামেশাই খাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই।...

খাদ্য ও পুষ্টি1 month ago

শিশুদের জন্য লবণ যতটুকু দরকার

অতিরিক্ত লবণ শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা প্রদানের পাশাপাশি অল্প বয়সে রক্তচাপের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিমাণ লবণ রাখতে হবে যা...

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন1 month ago

ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কেন

বয়সে টিংকু বেশ ছোট। এত ছোট যে মাঝেমধ্যে টিংকুর দাঁত পড়ে। একবার বিড়াল টিংকুকে আঁচড়ে দিল। চিকিৎসক বললেন যে র‌্যাবিসের...

Advertisement