Connect with us

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাঁচতে হবে জীবনকে উপভোগ করতে

Published

on

প্রবীণদের সাথে বেশিরভাগ আলোচনায় জীবন সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করতে দেখি।কত কষ্ট করে চাকরি, ব্যবসা বানিজ্য করে ধন সম্পদ অর্জন করেছেন তার দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনতে আমার ভালোই লাগে। মানুষের লড়াই সংগ্রামের মধ্যে গৌরব থাকে। ব্যাক্তিগত সহায় সম্পদ অর্জনের লড়াই সংগ্রাম সম্মান এবং মর্যাদার।

বেশিরভাগ মানুষ তাঁর অর্জিত সহায় সম্পদ জীবন কালে সবটা ভোগ করে যেতে পারেন না।

অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও পুরোটা ভোগ করেন না।পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যতটুকু সম্ভব রেখে যান। মানুষ আশা করে পরবর্তী প্রজন্ম থাকা খাওয়ার কস্ট পাবে না,আনন্দের জীবন পাবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুখ শান্তি বিবেচনায় নিয়ে সহায় সম্পদের বিলি বন্টন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন।
নিজের প্রবীণ জীবন কেমন হবে সেটা নিয়ে তেমন কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যায়না। মানুষের জীবনের শুরু এবং শেষ দিকে বেশি চ্যালেঞ্জ থাকে। এই চ্যালেঞ্জ গুলো ব্যাক্তির একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। শিশু কালে,শৈশবে, কৈশোরে পরিবার পরিজন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করেছে। একইভাবে বার্ধক্যে পৌঁছে প্রবীণ জীবনকে স্বস্তিদায়ক ও শান্তি পূর্ণ করার জন্য পরিবার ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলো বড় ধরণের ভূমিকা পালন করে। শিশুর জ্ঞান, দক্ষতা, যোগ্যতা বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। শিশুর মানবিক বিকাশে বিনোদন কে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু প্রবীণ জীবনকে আনন্দের সাথে উপভোগ করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনা।প্রবীণ কে ধারণা দেয়া হয় এবং প্রবীণ নিজেও মনে করে মৃত্যুর বেশি দেরি নেই। মৃত্যুর প্রস্তুতি হিসেবে ধর্মে কর্মে মনযোগ বাড়িয়ে দেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে নিজকে নিয়েজিত করেন অথবা আর্থিক সহায়তা দেন।ষাট বছর পার হওয়ার পর অনেকেরই ১৫/২০ বছরের বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি এবং জীবন যাত্রার মান্নোয়নের ফলে মানুষের আয়ু ৭৩ বছর অতিক্রম করেছে।
অচিরেই গড় আয়ু ৮০বছর হয়ে যাবে। দিন দিন প্রবীণ জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। বিপুল এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মেধা যোগ্যতা দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রবীণ জীবন কে কারো দয়া অনুগ্রহ কৃপার উপর ছেড়ে দেয়া যায় না।

বাংলাদেশের সকল প্রবীণ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পাবে না।
বাংলাদেশ উন্নত দেশ হলেও জনগোষ্ঠীর একটি অংশ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করবে। চাইলেই সব মানুষকে দরিদ্র সীমা অতিক্রম করে ধনী করা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উন্নত ধনী দেশ নরওয়েতে গরীব সুবিধা বঞ্চিত মানুষের বসবাস রয়েছে।

আমার এই লেখা হলো যাঁরা অপেক্ষাকৃত ভালো আছেন, খাওয়া পরার চিন্তা নেই, মোটামুটি সচল আছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে। আমাদের কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবি,লেখক, সমাজ সেবক রয়েছেন তাঁরা প্রবীণ বিষয় নিয়ে কোন কথা উঠলেই কোন কোন রাজনৈতিক নেতাদের মতো বলতে শুরু করেন, সকল প্রবীণ কে পাঁচ হাজার টাকা করে বয়স্ক ভাতা দিতে হবে, যান বাহনে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড় দিতে হবে, চিকিৎসা, সেবা,ওষুধ ফ্রী দিতে হবে ইত্যাদি। আরেক দল বলেন, প্রবীণের দায় দায়িত্ব সন্তানকে নিতে হবে অন্যথায় আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। আবার কেউ বলেন, প্রবীণের সকল দায়িত্ব সরকার কে বহন করতে হবে। তরুণ তরুণীরা কেউ কেউ বলছেন, শর্ত জুড়ে সন্তান লালন পালন প্রকৃতি বিরুদ্ধ চিন্তা। আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন, উনি আমার সাথে কথা বলে আলোচনা করে প্রবীণ হয়েছেন যে আমাকেই এখন তাঁর খাবার দাবার, দেখা শোনা, সেবা যত্ন করায় দায়িত্ব পালন করতে হবে!!
মূলতঃ বার্ধক্য ব্যক্তির একান্তই নিজস্ব অর্জন ফলে এর ফলাফল তাঁকে একাই বহন করতে হয়।

Advertisement

যাঁরা কম বয়সে মারা যান তাঁরা বার্ধক্য উপভোগ করার সুযোগ পান না।ফলে বার্ধক্য বিষয়ে নালিশ অভিযোগ করার তেমন সুযোগ থাকে না। বার্ধক্যে উপনীত হওয়া পরম সৌভাগ্যের বিষয়। এই সুযোগ সবার ভাগ্যে হয় না। বার্ধক্যে উপনীত হয়ে জীবন কে উপভোগ করার মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে। ভালো ভালো দামী খাবার গ্রহণ জীবন কে উপভোগ করার একটা বিষয় হতে পারে। নতুন ভালো মুখ রোচক খাবার মানুষের মনে আনন্দ দেয়। খাবারের সাথে মানুষের প্রেম সহজাত।

পরীক্ষায় পাস করলে, চাকরি হলে,বিয়ে করলে ,ভর্তির সুযোগ পেলে, পুরস্কার পেলে, পদোন্নতি হলে খাবারের আয়োজন করতে হয়। জন্ম গ্রহণ, মৃত্যু বরণ, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনকে খাবার দিতে হয়।
খাবার আয়োজন, পরিবেশনের ধরনের উপর ব্যক্তির মান মর্যাদা নির্ভর করে। ভালো খাবার জীবন উপভোগের একটি বিষয়।
প্রবীণ বয়সে সাধারণত গড়ে দেড় হাজারের মতো ক্যালোরী একজন প্রবীণের প্রয়োজন হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শে ক্যালোরী বাড়ানো কিংবা কমানো লাগতে পারে।

খাবার গ্রহণে পরিমিত বোধ জীবন উপভোগ করার প্রধান শর্ত। পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেকেই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কে বেশি গুরুত্ব দেন।এটা অনেক ভালো একটা গুণ। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন,ঢিলে ঢালা,সূতির জামা কাপড় শরীরে আরামদায়ক হবে। ভালো মানের জুতা,চশমা, ঘড়ি, মোবাইল ব্যবহার করাও জীবন উপভোগ করার বিষয়। উপরের বিষয় গুলো হলো বস্তুগত উপভোগ। অবস্তুগত উপভোগের মধ্যে পড়ে জ্ঞানাজর্ন,বই পড়া,গল্প বলা-শোনা,বেড়াতে যাওয়া, সামাজিক কাজে অংশ গ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, নির্বাচনে অংশ গ্রহণ, খেলাধূলায় অংশ গ্রহণ, ইত্যাদি। মৃত্যুর অপেক্ষা করার নাম জীবন হতে পারে না। মৃত্যু অনিবার্য, কেউ ঠেকাতে পারবে না তাই জীবন কে যতটা সম্ভব উপভোগ করতে হবে। জীবনে কিকি দুঃখ- কষ্ট, নির্যাতন -নিপীড়ন ভোগ করেছেন তা নিয়ে সবসময় মন খারাপ করার কোন মানে হয় না।

দুঃখ কষ্টের কথা যতবার মনে পড়বে ততবারই নতুন করে কষ্ট পেতে হবে। এই কষ্ট বার বার পেয়ে আপনার কোন লাভ হবে না। দুঃখ কষ্টের কথা যতটা সম্ভব ভুলে থাকতে হবে। নিজেকে হাসি খুশি রাখুন, যত্ন নিন,টাকা পয়সা খরচ করুন, নিজেকে দাতা হিসেবে তৈরি করুন, প্রত্যাশা কমিয়ে দিন,অভিযোগ নালিশ বন্ধ করুন, ভালো মন্দ খান, জীবনকে উপভোগ করুন।

লেখক : হাসান আলীম, প্রবীণ বিশেষজ্ঞ

Advertisement
Continue Reading
Advertisement
Advertisement
জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন1 week ago

শীতে রোগবালাই বাড়ে কেন?

শীতের সময় বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে সর্দি কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ বৃদ্ধি পায়। আজ ৬ জানুয়ারি এনটিভির...

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন1 week ago

‘মেনোপজ’ পুরুষদেরও হয়! কোন বয়সে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে? লক্ষণই বা কী?

‘মেনোপজ’ বা ঋতুবন্ধ শব্দটা শুনলেই মাথায় আসে মহিলাদের কথা! তবে পুরুষেরও যে ‘মেনোপজ’ হয়, সেটা অনেকেরই অজানা। ঋতুবন্ধের মতো অ্যান্ড্রোপজ...

প্রধান খবর1 week ago

শূন্যপদে নিয়োগ, সুপার স্পেশালাইজড পূর্ণ সচলের দাবিতে আন্দোলনে চিকিৎসকরা

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) ও এর অধীন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে শূন্যপদ পূরণ না হওয়া ও অব্যবহৃত আধুনিক অবকাঠামো...

Advertisement