Connect with us

স্বাস্থ্য সংবাদ

হেপাটাইটিসে নারীদের তুলনায় পুরুষের আক্রান্তের হার দ্বিগুণ

Published

on

দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি মানুষ। ঘনবসতি এবং ভাইরাস ছড়ানোর উৎসগুলো বেশি বলে শহরে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। আর নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্তের হার দ্বিগুণ

বর্তমান সময়ে দেশের তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এরমধ্যে হেপাটাইটিস ভাইরাসের বি ও সি ধরনে আক্রান্ত হতেই বেশি দেখা যায়। জানা গেছে, হেপাটাইটিস বি রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষদের আক্রান্তের হার দ্বিগুণ।

২৮ জুলাই ছিলো বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। “হেপাটাইটিস নিয়ে অপেক্ষা নয়” প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়। এ দিবসকে কেন্দ্র করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

হেপাটাইটিস নিয়ে কাজ করা দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেপাটোলজি সোসাইটির বরাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রায় ১ কোটি। প্রায় ৫৭ লাখ পুরুষ ও ২৮ লাখ নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসকদের মতে, ঘনবসতি এবং ভাইরাস ছড়ানোর উৎসগুলো বেশি বলে শহরে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৬০% ব্যক্তির বয়স ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। ৩০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে গেছেন, তারাই বেশিরভাগ এতে আক্রান্ত হয়েছেন।

Advertisement

তবে হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসের কারণে দেশের কত মানুষ মারা যায়, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলমের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ২০০৫ সালের দিকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকাদান শুরু হয়। এর আগে যাদের জন্ম, তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। যার ফলে এখনকার তরুণ এবং যুবকদের মধ্যে বি ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি।

তবে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের বিপদের মাত্রা জানিয়ে তিনি বলেন, “বেশিরভাগ মানুষ এটার (হেপাটাইটাইটিস বি) বাহক। এদের শুধু ফলোআপ চিকিৎসায় রাখলেই হয়। আর যারা ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসা না দিলে লিভার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর হেপাটাইটিস সি হলে চিকিৎসা নিতেই হবে।”

 

 

Advertisement

 

 

তিনি আরও জানান, দেশে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার হয়, তা বারবার ব্যবহার এবং সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে না পারার ফলে সংক্রমণ ছড়ায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ০.৫% এর বেশি হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, পূর্বের তুলনায় দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ কমেছে।

বিএসএমএমইউইয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব বলেন, “টিকাদানের কারণে দেশে ৫ বছর বয়সীদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ ১% এর নিচে নেমে এসেছে। যা বড়দের মধ্যে ০.৫%।” শাহিনুল আলমও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে জানান, শিশুদের প্রায় ৯৫% টিকার আওতায় আছে। এ ভাইরাস বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুকালে মায়ের কাছ থেকে আসে।

Advertisement

সংক্রমণ শহরে বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, “রক্ত দেওয়া, চিকিৎসার কারণে হাসপাতালমুখী বেশি হওয়া, ইনজেকশন নেওয়া ও মাদকাসক্তের পরিমাণও বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে চলাচল বেশি করায় কর্মক্ষম ও যুবক-তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি।”

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত ৯০% ব্যাক্তিই তাদের শরীরে ভাইরাস দুটির অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন অজ্ঞ। নিজেদের অজান্তেই তারা অন্যকে সংক্রমিত করেন। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস নীরবে যকৃতকে ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে লিভার সিরোসিস, লিভারের ক্যানসার ও শেষ পর্যন্ত লিভারকে অকার্যকর করে দেয়। বিশ্বে ভাইরাল হেপাটাইটিস হচ্ছে মৃত্যুর ১০ম এবং লিভার ক্যানসার ৩য় কারণ।

অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২১ হাজার মানুষ যকৃতের অসুখের কারণে মারা যায়।”

শাহিনুল আলম জানান, করোনাভাইরাসের মধ্যে অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে। ফলে হেপাটাইটিসের চিকিৎসাও বর্তমানে কিছুটা শিথিল।

Advertisement
Continue Reading
Advertisement