শিশুর বিকাশ (জন্ম থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত)
শিশুর বৃদ্ধি একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এক একটা বয়সে শিশুর এক একটা কাজ করা উচিত, একে বলে বিকাশের স্তর। তবে বয়স অনুযায়ী শিশু কাজকর্ম করছে কিনা সেদিকে নিয়মিত নজর রাখা উচিত প্রত্যেক মা বাবার। কেননা দুটি বাচ্চার বিকাশ সমগতিতে হয় না। শিশু অন্য রকম ব্যবহার করছে, তার কারন হয়তো সে অসুস্থ বা কোন কারনে বিপর্যস্ত। কখনো কখনো তার বিকাশ কোনো কোনো বিষয়ে সম বয়সের অন্য বাচ্চাদের তুলনায় ধীরে হতে পারে। কিন্তু অন্য বিষয়ে হয়তো অন্যদের থেকে অনেক আগে হতে পারে।শিশু নিজে প্রস্তুত না হলে তাকে হাঁটতে শেখার জন্য জোর করলে কোনো উপকার হয় না। তাই প্রত্যেক অভিভাবককে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
শিশুর বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ স্তরঃ
শিশুর বিকাশের স্তর হল একটি ক্ষমতা যা নির্দিষ্ট বয়সের অধিকাংশ শিশুদের দ্বারা অর্জিত হয়। বিকাশের স্তরগুলি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগীয়/জ্ঞানীয় এবং যোগাযোগ দক্ষতা যেমন হাটা, দৌড়ানো কথা বলা ইত্যাদি।শিশুর জন্মের পর শিশুর বেড়ে ওঠার ধারা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পরিনতি লাভ করে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
শিশুর মানসিক বিকাশের ধাপগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সে যদি তা যথাসময়ে অর্জন করে, তবে তার বিকাশ স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যায়। শিশু অন্য রকম ব্যবহার করছে, তার কারন হয়তো সে অসুস্থ বা কোন কারনে বিপর্যস্ত। এগুলো অবশ্য শিশুভেদে কখনো একটু এদিক – ওদিক হতেই পারে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও শিশুটি যদি বিকাশের ধাপ অর্জনে ব্যর্থ হয়, তবে তার বিকাশের বিলম্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আলোচিত বিকাশের স্তরগুলোর মধ্যে কয়েকটি যদি শিশুর মধ্যে প্রকাশ না পায়, তবে শিশুর বিকাশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা যেতে পারে। সাধারনভাবে এই দক্ষতাগুলোর মধ্যে ২৫ শতাংশ না দেখা গেলে বলা যেতে পারে শিশুর বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে। তা ছাড়া কয়েক মাস পরও যদি শিশু বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক কাজ করতে না পারে, তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো দরকার।
জন্ম থেকে ২ মাস
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
২ মাস বয়সে অধিকাংশ শিশু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকাশ হয়ে থাকে, কথা বললে হাসি দেয়,শিশু নিজে নিজে কান্না থামায় ও মুখে হাত নিয়ে চুষতে পারে। শিশু বাবা মাকে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে পারে। স্থির দৃষ্টিতে মুখের দিকে তাকাতে পারে, কোলে নিয়ে দোলালে শান্ত হয়।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
শিশুরা এইসময়ে কান্না ছাড়া গলা দিয়ে শব্দ করতে শুরু করে। শব্দ শুনে মাথা সেদিকে ঘুরিয়ে দেখতে চায়।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন, চিন্তন, সমস্যা সমাধান)
মুখ দেখে শিশুরা হাসে, হঠাৎ আওয়াজে চমকে যায়। শিশুরা খুশি প্রকাশ করতে শেখে, কষ্ট পেলে মুখে তার অভিব্যাক্তি দেখা যায়।
শারীরিক বিকাশঃ
শিশুর মাথা একদিকে ফিরিয়ে চিত হয়ে শুতে পারে, হাত পা অনবরত নড়াচড়া করতে পছন্দ করে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
২ মাস বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
জোরে শব্দ হলে প্রতিক্রিয়া না করা
মুখ দেখে না হাসা
নড়াচড়া করে এমন জিনিসের দিকে না তাকান।
উল্টো অবস্থায় শোয়ানো থাকলে মাথাটা তুলতে না পারা বা চেষ্টা না করা।
৪ মাস
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
৪ মাস বয়সে শিশু স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসতে পছন্দ করে,শিশুটি মাকে চিনতে পারে,মানুষের সাথে খেলতে পছন্দ করে, খেলা বন্ধ করলে কান্না করে।কিছু অভিব্যাক্তি অনুকরন করে যেমন হাসি দিলে হাসে, কথা বললে মুখ দিয়ে শব্দ করে।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
৪ মাস বয়স থেকে শিশু অর্থহীন শব্দ বলা শুরু করে, অভিব্যাক্তির সাথে সাথে শব্দ করে এবং যে শব্দ শোনে অনুরূপ শব্দ করার চেষ্টা করে।ক্ষুধা ক্লান্তি ও ভয় অনুভূতির সাথে সাথে শিশুর কান্নার ধরন ও পরিবর্তন হয়।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
শিশু গলা জরিয়ে ধরে, ঘুরিয়ে তাকায় এবং আদর করলে প্রতিক্রিয়া করে। খেলনা এক হাত থেকে অন্য হাতে নিতে পারে। চোখের দৃষ্টি কোন জিনিসের প্রতি স্থির করতে পারে। চলন্ত জিনিসের সাথে সাথে শিশু ও ঘুরে এদিক অদিক তাকায়।পরিচিত মানুষ চিনতে পারে ও দূরত্ব বুঝতে পারে।
শারীরিক বিকাশঃ
হাতের মুঠো বন্ধ করতে পারে। বাচ্চার হাতের তালুতে কিছু ছোঁয়ালে সেটা ধরার চেষ্টা করে, ঘাড় শক্ত হয়, সোজা করে শোয়ালে উল্টো হয়, শিশু পা দিয়ে জিনিস ধাক্কা দেয়, এবং হাত পা মুখে দিতে চায়।যখন সোজা করে তোলা হয় সে বেশ কিছুক্ষন মাথা সোজা রাখতে পারে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
৪ মাস বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
নড়াচড়া করে এমন জিনিসের দিকে ঘুরে না তাকানো
পরিচিত মুখ দেখে না হাসা
ঘাড় শক্ত না হওয়া
মুখ দিয়ে কোন শব্দ না করা
মুখে কোন কিছু না দেওয়া
পা দিয়ে ধাক্কা না দেওয়া
চোখ ঘুরিয়ে দেখতে সমস্যা হলে
৬ মাস
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
শিশু পরিচিত মানুষ দেখে হাসে, অনেক শিশু অপরিচিত ব্যাক্তিদের কোলে যেতে চায় না ,অন্যদের সাথে খেলতে পছন্দ করে বিশেষ করে বাবা মার সাথে খেলতে পছন্দ করে, অন্যদের আবেগ বুঝে ও বেশিরবভাগ সময় হাসিখুশি থাকে।আয়নায় নিজেকে দেখে খুশি হয় বা আশ্চর্য হয়।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
শিশু যে শব্দ শোনে অনুরূপ শব্দ করার চেষ্টা করে, অস্ফুট শব্দগুলো দুই শব্দের হয়।নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়, আনন্দ ও কষ্ট পেলে ভিন্ন শব্দ করে, এক শব্দ অনেকক্ষন করতে থাকে ।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
শিশু আশেপাশের জিনিস তাকিয়ে দেখে, জিনিস মুখে দেয়, দূরের কোন জিনিস ধরার জন্য কৌতূহল কাজ করে, এক হাত থেকে জিনিস অন্য হাতে নিতে পারে। আশেপাশের শব্দ শুনলে মাথা ঘোরায়।
শারীরিক বিকাশঃ
শিশু ৬মাস বয়সে চিত থেকে উপুড় বা উপুড় থেকে চিত হতে পারে, ঠেকা দিয়ে অল্প সময়ের জন্য বসতে পারে, শিশুকে উচু করে ধরলে পায়ে কিছু ভার নিতে পারে।উপুর হয়ে শুয়ে হাত –পা ছড়িয়ে নিজের শরীরের ভার নিতে পারে। শিশু দুই হাত জড়ো করে খেলে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
৬ মাস বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
নাগালের মধ্যে কোন জিনিস না ধরতে চাওয়া।
বাবা মা বা তাকে যে দেখাশুনা করে তার প্রতি প্রতিক্রিয়া না দেখা।
আশেপাশের শব্দ শুনলে মাথা না ঘোরানো ।
মুখের কাছে কোন জিনিস নিতে কষ্ট হওয়া।
মুখে অস্ফুট শব্দ না করা।
নিজে নিজে চিত কাত না হওয়া।
না হাসা বা চিৎকার না করা।
খুব শক্ত হয়ে থাকা বা পেশী শক্ত থাকা।
খুব নিস্ক্রিয় থাকা।
৯ মাস
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
শিশু নতুন কোন ব্যক্তি দেখে ভীত হতে পারে,অনেক শিশু অপরিচিত ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কার ও কাছে যেতে চায় না। মায়ের সঙ্গে বা যে তাকে দেখা শুনা করে তার সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। মায়ের কাছে সরিয়ে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে আপত্তি প্রকাশ করে।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
শিশু হ্যাঁ /না বুঝতে পারে, বড় শব্দ বলতে পারে,ভিন্ন ভিন্ন শব্দ বলতে পারে,যেমন মা বাবা ।অন্যের মুখে কথা শুনে একইরকম শব্দ করার চেষ্টা করে।আঙ্গুল দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু দেখাতে পারে।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
শিশুরা এইসময়ে টুকি (মুখ লুকিয়ে মুখ দেখানোর খেলা) পছন্দ করে, অনেক শব্দ বলতে শেখে।কোন জিনিস চাইলে দিতে পারে,এক হাত থেকে অন্য হাতে জিনিস সহজেই নিতে পারে।
শারীরিক বিকাশঃ
শিশু দাঁড়াতে পারে কোন কিছু ধরে এগোনোর চেষ্টা করে, আসন করে বসতে পারে, সমর্থন ছাড়াই বসতে পারে। হাত মুঠো করে কোন জিনিস ধরে টান দিতে পারে।নিজের বাহু নিয়ন্ত্রন করতে শেখে।হামাগুড়ি দেয়া শুরু করে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
৯ মাস বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
সমর্থন ছাড়াই বসতে না পারা বা সমর্থন দিয়ে বসতে না পারা।
মা বাবা দাদা ইত্যাদি শব্দ না বলা।
মুখে অস্ফুট/অর্থহীন শব্দ না করা।
কোন খেলনার প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করা।
এক হাত থেকে জিনিস অন্য হাতে না নেওয়া।
১বছর
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
শিশু অপরিচিত লোক দেখে লজ্জা ও জড়তা কাজ করে, বাবা মা বাইরে গেলে কান্না করে। পছন্দের ব্যাক্তি বা মানুষ বুঝতে পারে।কিছু পরিস্থিতিতে ভয় পায়।গল্প বললে বা শব্দ শোনে মনোযোগী হয়। রাগ ও ভালবাসার প্রকাশ শেখে। প্রবল উৎসুক নিয়ে নানান জিনিসে হাত দিতে দেয় ,মুখে দেয়। কোন জিনিস দিতে বা নিতে শিখে.
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
শিশুকে কোন বিষয়ে অনুরোধ করলে সাড়া দেয়, হাত নেড়ে টা টা করতে শেখে।না বললে বুঝতে পারে । কথা বললে সাড়া দিয়ে সেও কিছু বলার চেষ্টা করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
শিশু ভিন্ন উপায়ে প্রকাশ করতে পারে নিজেকে যেমন কোন জিনিস হাত ছুঁড়ে মারা। লুকানো জিনিস খুঁজে বের করতে পারে,।নির্দিষ্ট জিনিস নাম ধরে সনাক্ত করতে পারে। অন্যর অভিব্যাক্তি অনুকরন করতে পারে। কাপ দিয়ে পানি খাওয়া চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো ইত্যাদি আচরন রপ্ত করে, শিশু দুটো জিনিস একত্রে জোড়া লাগাতে পারে, বোতলে/পাত্রে কোন জিনিস ভরতে পারে বের করতে পারে। আঙ্গুল দিয়ে জিনিস দেখাতে পারে। সাধারন নির্দেশনা বুঝে কাজ করতে পারে যেমন খেলনা যথাস্থানে রাখা।
শারীরিক বিকাশঃ
শিশু অন্য কারও সাহায্য ছাড়াই বসার ভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে। শিশুরা এই বয়সে দাঁড়াতে শেখে । হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটু এগোতে পারে। বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনী একত্র করতে পারে। শিশু ফার্নিচার ধরে হাঁটতে পারে। অনেক শিশু একা একা হাঁটতে পারে। পায়ের উপর নিয়ন্ত্রন আসে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
১ বছর বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
হামাগুড়ি না দেওয়া।
সমর্থন দিয়েও দাঁড়াতে না পারা।
লোকানো জিনিসের প্রতি আগ্রহ না দেখানো।
এক শব্দ না বলা।
হ্যাঁ/না মাথা না ঝাকানো।
নির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তু বুঝতে না পারা।
অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব।
১৮ মাস
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
শিশু ছোটখাটো নির্দেশ মানতে শেখে, অন্যের হাত থেকে কিছু নিয়ে খেলতে পছন্দ করে, মা বা যে দেখাশুনা করে তার কাছ থেকে সরিয়ে নিলে অত্যন্ত দুঃখ পায়।অনেক কথা শুনে সেগুলি উচ্চারন করে। আগ্রহ নিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। খাবার নিজে নিজে মুখে দিতে পারে,পুতুল কে দুধ খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো ইত্যাদি অনুকরন করে।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
অনেক একক শব্দ বলতে পারে,হ্যাঁ/না বলা বুঝতে পারে, এবং মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়।শিশুর চাহিদা সে দেখাতে পারে,এবংশিশু হাত দিয়ে দেখায় সে কি নিতে চায়।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
শিশু নিত্য ব্যবহার্য জিনিস বুঝতে পারে,যেমন টেলিফোন, ব্রাশ, চামচ। অন্যের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে, পুতুল বা প্রানীর প্রতি আগ্রহ দেখায় ও খাওয়াতে চায় তাকে সেভাবে খাওয়ায়।শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাম বলতে পারে।নিজের জিনিস গুলো বুঝতে পারে, অভিব্যাক্তি ছাড়াই শব্দ বলতে পারে। দেখিয়ে দিলে কাগজে পেন্সিল ক্রেয়ন দিয়ে আঁকিবুকি করতে পারে।
শারীরিক বিকাশঃ
শিশু একা একা হাঁটতে পারে, দৌড়াতে পারে বেশ কিছুক্ষন হাঁটতে পারে ১০ মিনিটের মত। কাপড় খুলতে পারে,একা পানি কাপ দিয়ে খেতে পারে,বাটিতে কিছু দিলে চামচ দিয়ে খেতে পারে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
১৮ মাস বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
নির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তু হাত দিয়ে না দেখানো।
হাঁটতে না পারা।
পরিচিত জিনিস চিনতে না পারা।
অন্যকে অনুকরন না করা।
নতুন শব্দ বলতে না পারা।
কমপক্ষে ৬টি শব্দ না বলা।
বাবা মার প্রস্থানে কান্না করা বা ভাবান্তর না হওয়া।
২ বছর
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
শিশু অন্যকে অনুকরন করে বিশেষ করে বড়দের বা অন্য শিশুকে। অন্য শিশুদের সাথে থাকার সময় উচ্চসিত থাকে। মাঝে মাঝে অবুঝ হয়ে চেঁচামেচি করে, যা বলা যায় তার উল্টো করতে পছন্দ করে নিজে নিজে সব কিছু করে স্বাধীনতা প্রকাশ করতে চায়। অন্য শিশুকে বাবা মা আদর করলে অখুশি হয়।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
ছবি দেখে নাম বলতে পারে, পরিচিত ব্যাক্তিদের নাম বলতে পারে ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাম ভালভাবে বলতে পারে .২ থেকে ৪ শব্দের বাক্য বলতে পারে।সাধারন নির্দেশনা বুঝে কাজ করতে পারে যেমন- (ঘুমুতে যাও,এটা খাও ,এখানে বস)কথা বললে কঠিন শব্দ পুনারাবৃওি করতে পারে।বইয়ের জিনিস দেখে বস্তুর নাম বলতে পারে।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
শিশু দুই তিন পরতে ঢাকা জিনিস খোঁজে বের করতে পারে, আকার এবং রঙ এর ধারনা তৈরি হয়। পরিপূর্ণ বাক্য ও ছড়া বলতে পারে. ৪ বা বেশি ব্লক সাজিয়ে চূড়া বানাতে পারে। পায়খানা ও প্রস্রাব নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা আসে, দুটি ধাপে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ কতে পারে যেমন, (জুতা খোলে তাকে রেখে আস)। ছবি দেখে বইয়ের প্রানির নাম বলতে পারে।
শারীরিক বিকাশঃ
শিশু সুন্দরভাবে দাঁড়াতে পারে,বলে লাথি দিতে পারে, শিশু জোড়ে দৌড়াতে পারে।উপরে চেয়ার ও টেবিলে আরোহন করতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে ধাপে ধাপে পা ফেলতে পারে। বল শূন্যে ছুঁড়তে পারে,লম্বা রেখা বা বৃত্ত অনুকরন করে চলা বা লিখতে পারে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
২ বছর বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
দুটি শব্দের সংযোগ না করতে পারা যেমন (দুধ পান করা,)
শিশু নিত্য ব্যবহার্য জিনিস না বুঝতে পারা ,যেমন টেলিফোন, ব্রাশ,চামচ,জামা ইত্যাদি।
শব্দ ও কাজ অনুকরন না করা
সাধারন নির্দেশনা অনুসরন না করা
হাঁটতে না পারা
৩ বছর
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
শিশু অন্য শিশুদের সাথে বন্ধু তৈরি করতে পারে,হারিয়ে যাবার ভয় দেখা দিতে পারে। চেঁচামেচি করে শিশু রাগ প্রকাশ করে। কারোর খুশি,দুঃখ বা রাগ হয়েছে কিনা-সেটা মুখ দেখে বোঝার ক্ষমতা জন্মায়,বোকা বানিয়ে মজা পেতে শেখে।নিজের ও অন্যের জিনিস ধারনা হয়, অনেক শিশু নিজের খেলনা অন্যকে দিতে চায় না,তবে অন্য বাচ্চার পাশে বসে খেলতে ভালবাসে। ।বাবা –মাকে নকল করতে চায়,অনেক সময় নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায়। কিছু করতে বললে আপত্তি জানায়,হুকুম দিতে ভালবাসে। একই রুটিনে চলতে পছন্দ করে।কি চায় –অনেক সময় ঠিক বুঝে উঠতে পারে না । না বুঝিয়ে বলতে পারে না। একা একা জামা কাপড় পড়তে পারে। বাব মা ছাড়া সহজেই একা থাকতে পারে।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
ছোট ছোট বাক্য বলতে শেখে- সেগুলি ব্যবহার করে জগতকে জানার চেষ্টা করে, এই বয়সে অনেক সময় তোতলামি দেখা দিতে পারে,কিন্ত সেটা স্থায়ী হয় না।পরিচিত জিনিসের নাম বলতে পারে,উপর, নিচ,পাশে বুঝতে পারে।নিজের ছোট নাম, বয়স,সে ছেলে না মেয়ে বলতে পারে।বন্ধুর নাম মনে রাখতে পারে।আমি তুমি সে ইত্যাদি সম্বোধন বুঝে ডাকতে পারে।বহুবচন শব্দ বুঝে বলতে পারে,যেমন গাড়িগুলো, পাখিরা।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান).
৩ বছরে শিশু বোতাম লাগাতে পারে,কোন কিছু ঘুরিয়ে খোলতে পারে।পুতুল,প্রানী, মানুষকে নিয়ে গঠনমূলক খেলা খেলতে পারে.৩-৪ টুকরা পাজল মিলাতে পারে,দুটি জিনিস সংযুক্ত করতে পারে।পেন্সিল দিয়ে বৃত্ত আঁকতে ও ভরাট করতে পারে।বইয়ের পাতা উল্টাতে পারে.৬বা বেশি ব্লক সাজিয়ে চূড়া বানাতে পারে।দরজা খোলা,ঢাকনা তোলা বা লাগাতে পারে।
শারীরিক বিকাশঃ
সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে উঠতে পারে, ট্রাই সাইকেল চালাতে পারে,সাহায্য ছাড়াই অল্প উপরে আরোহন করতে পারে
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
৩ বছর বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না পারা বা কষ্ট হোয়া।
কথা স্পষ্ট না হওয়া।
সাধারন খেলনা দিয়ে না খেলতে পারা।
বাক্য বলতে না পারা।
সাধারন নির্দেশনা অনুসরন না করা।
অন্য শিশুদের সাথে মিশতে না পারা বা খেলতে পছন্দ না করা
চোখে চোখে না তাকানো।
৪ বছর
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা দেখায়,অন্ধকারে ভয় পায়, আঘাত পাবার ভয় ও দেখা দেয়।দলে বা অংশগ্রহনমূলক খেলা খেলতে পছন্দ করে। দেয়া নেয়া করতে শেখে। আমার কথাটা ব্যবহার করে এবং একসঙ্গে সবার সঙ্গে খেলতে শেখে। ছেলেদের বাবার সঙ্গে এবং মেয়েদের মায়ের সঙ্গে একাত্মতা বোধ শুরু হয়।অন্য ছেলেমেয়েদের শরীর সম্পর্কে কৌতূহল জন্মায়।কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করে খেলা করে । তার আগ্রহ ও পছন্দের বিষয় বলতে পারে।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
৪ বছর বয়সে শিশুরা সে, তিনি,তার ইত্যাদি সম্বোধন করে কথা বলতে পারে।কবিতা ও গান বলতে পারে। এই বয়সে শিশু গুছিয়ে গল্প বলতে পারে,পুরো নাম বলতে পারে।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
সংখ্যা ও রঙের নাম বলতে পারে,গননা করতে ও সময় বুঝতে পারে।গল্পের আগের ও পরের অংশ মনে করতে পারে।একইরকম ও ভিন্ন জিনিসের ধারনা হয়।গঠন মূলক কিছু আঁকতে পারে।কাচি ব্যবহার করতে পারে, বোর্ড ও কার্ড গেইম খেলতে পারে,বইয়ের চিত্রে কি আছে বলতে পারে। গোল আঁকতে পারে,ক্রস আঁকতে পারে
শারীরিক বিকাশঃ
শিশু এক পায়ে দাঁড়াতে শেখে,লাফিয়ে সামনে ও পেছনে যেতে পারে। বল হাত দিয়ে উপর থেকে ধরতে পারে খাবার মাখাতে পারে ও মাছের কাটা আলাদা করতে পারে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
৪ বছর বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
লাফ দিতে না পারা।
অংশগ্রহন মূলক খেলায় আগ্রহ না থাকা।
অন্য শিশুদের এড়িয়ে চলা ।
বাবা মা বা পরিবারের লোকজন বাইরে গেলে প্রতিক্রিয়া না কর।।
কাপড় পরা ,টয়লেট ব্যবহার না করতে শেখা।
গল্প বলতে না পারা।
৩ অংশের নির্দেশনা বুঝতে না পারা।
একরকম ও ভিন্ন রকম জিনিসের পার্থক্য না বুঝা।
সঠিকভাবে আমি তুমি ও সে ব্যবহার না করে কথা বলা।
৫ বছর
সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশঃ
অন্যদের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করে, প্রতিযোগিতা মুলক খেলার ব্যাপারে উৎসাহী হয়।শিশুর কর্তব্যবোধ জন্মে, নিজের কার্যক্ষমতায় আত্মসন্তুষ্টি লাভ করে। নিয়মের সাথে অভ্যস্থ হয়।অভিনয়, গান,নাচ পছন্দ করে।সত্য মিথ্যা গল্প বুঝতে পারে। একা একা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।মাঝে মাঝে চাহিদা করে পূরণ না হলে জেদ করে।মাকে কাজে সহযোগিতা করে।
ভাষাগত ও যোগাযোগঃ
খুব স্পষ্টভাবে কথা গুছিয়ে বলে,ভবিষ্যত কালে কথা বলতে পারে যেমন ( বাবা আসবে,মা দিবে)।নাম ঠিকানা বলতে পারে।
জ্ঞানীয়(শিক্ষন,চিন্তন,সমস্যা সমাধান)
এই বয়সে শিশু ১০এর বেশি গুনতে পারে।আকার,আকৃতি,মানুষ হাত পা আঁকতে পারে।অক্ষর ও সংখ্যা লিখতে পারে। ত্রিকোণ ও চারকোণা আঁকতে পারে। খাবার টাকা এগুলোর সঠিক প্রয়োগ বোঝে।কথা বলার ধরন বড়দের মত করার চেষ্টা করে, কথাগুলো মোটামুটি শুদ্ধ হয়। গল্প বুঝতে পারে।
শারীরিক বিকাশঃ
লং জাম্প, হপ, স্কিপ ইতায়াদি করতে পারে। নিজের জামা নিজে পড়ে।চামচ, ছুরি ব্যবহার করতে পারে।টয়লেট ব্যবহার করতে পারে।
শিশুর বিকাশে বিলম্বঃ
৫ বছর বয়সে যেসব লক্ষন দেখে শিশুর বিকাশ বিলম্ব হচ্ছে বোঝা যাবেঃ
অতিরিক্ত ভয়, লজ্জা ও রাগ প্রকাশ করা।
নিত্য ব্যবহার্য কাজ না করতে পারে।
৫ মিনিটের বেশি কোন কাজে মনোযোগ না থাকা।
মানুষের ডাকে সাড়া না দেওয়া ।
অন্যকে বা নিজেকে আঘাত করা বা জিনিস ভাংচুর করা।
ভিন্ন ভিন্ন কাজ না করা,(এক ধরনের কাজে বা খেলনা দিয়ে খেলা)।
নাম বলতে না পারা।
অতীত কালে বা ভবিষ্যতে কথা বলতে না পারা ।
ছবি না আঁকতে না পারা।
ব্রাশ করা, হাত ধোয়া,মোছা ও কাপড় খোলা, ইত্যাদি নিজে নিজে না করতে না পারা।