বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ অতীতে যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গু বর্তমান সময়ের সবচেয়ে পীড়াদায়ক রোগের একটি। এই জ্বরে আক্রান্ত একদিকে যেমন দূর্বল হয়ে পড়ে অন্যদিকে এর রেশ শরীরে থেকে যায় দীর্ঘদিন। বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক চললে এ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। এডিস মশকী এই ভাইরাস বহন করে। আমাদের দেশে বর্ষাকাল থেকে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে এই জ্বরের বিস্তার বেশি হয়। সারাবিশ্বে বছরে ৪০০ মিলিয়নের মত লোক আক্রান্ত হয়। এখনও কোন টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা।
কোন শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে?
কীভাবে ছড়ায়:
ডেঙ্গু জ্বর কীভাবে ছড়ায়, এ বিষয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের দ্বারা এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কাউকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।’
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ:
ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে চার ধরনের ভাইরাসজনিত ট্রপিক্যাল বা উষ্ণণ্ডলীয় রোগ। এটি সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত এডিস মশকী দ্বারা ছড়ায়।
রোগ লক্ষণ:
একজন ডেঙ্গু জ্বরে ব্যক্তির সাধারণত উচ্চ জ্বর হয় অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার থেকে বেশি হবে। সাথে নিম্নের লক্ষণগুলোর অন্তত দুটি প্রকাশ পাবে।
তীব্র মাথা ব্যথা
চোখের পিছনের দিকে তীব্র ব্যথা
জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
মাংসপেশী অথবা হাড়ে ব্যথা (এজন্য অন্য নাম: হাড় ভাঙ্গা জ্বর)
হামের মত র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়
নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে
রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ করে যাবে।
লক্ষণগুলো রোগীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ছোট বাচ্চা ও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক, শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে রোগের তীব্রতা বেশি হয়।
জটিলতা:
সাধারণত ৩-৭ দিনের মধ্যেই জ্বরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায় দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
তীব্র পেট ব্যথা ও ক্রমাগত বমি
ত্বকে লাল দাগ
নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে
বমির সাথে রক্ত আসলে
কালো বা আলকাতরার মত পায়খানা হলে
ত্বক ফ্যাকাশে, ঠান্ডা ও স্যাঁতসেতে হলে
শ্বাসকষ্ট হলে।
প্রতিরোধ:
এ রোগের কোন টিকা নেই। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয়। এজন্য –
জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশকী ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন।
দিন ও রাতে আলোতেও এরা কামড়ায়। তাই দিনের বেলাতেও মশারী ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
চিকিৎসা:
এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রোগ লক্ষণগুলোর উপর চিকিৎসা দেয়া হয়।
রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখুন।
প্রচুর পানি পান করতে দিন।
স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিন।
প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ানো যাবে।
ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ঔষধ দিন।
রোগীকে অ্যাসপিরিন বা এজাতীয় ঔষধ দিবেন না।
ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়।