Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

সকাল সকাল উচ্চ রক্তচাপ : কতটা ক্ষতির কারণ?

Published

on

উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের রক্তের চাপ সারাদিন ধরেই ওঠা-নামা করতে থাকে। তবে অনেকসময় আক্রান্তদের রক্তচাপ সকালের দিকে বেড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠেই বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের কারণে হৃদপিণ্ডের সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি ব্যাপারে আক্রান্ত হন একজন মানুষ।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বেড়ে যাওয়া এই রক্তচাপ আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর? এর মোকাবিলা কীভাবে করবেন?

রক্তচাপ কেমন হওয়া প্রয়োজন?

সাধারণত হৃদপিণ্ড কতটা দ্রুত শরীরের রক্তনালীগুলোতে রক্ত পরিচালনা করছে সেটার ওপর নির্ভর করে একজন মানুষের রক্তচাপ কেমন আছে। রক্তচাপ উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপ, শারীরিক কার্যক্রম এবং খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়।

একজন মানুষের রক্তচাপ মাপা হলে মোট দুটি নম্বর পাওয়া যায়। প্রথম বা ওপরের নম্বরটিকে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার বলা হয়। এটি হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করার সময় তৈরি হয়। আর অন্যটিকে বা নিচের সংখ্যাটিকে ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার বলা হয়। হৃদপিণ্ড যখন রক্ত পরিচালনা করে শান্ত হয়ে পড়ে, তখন এই রক্তচাপ দেখা যায়।

Advertisement

রক্তচাপ মাপার জন্য যে পদ্ধতিটি অবলম্বন করা হয় সেটি হলো- মিলিমিটার অব মারকুরি। এটি শরীরের রক্ত পরিবাহী নালীগুলোর মধ্যে থাকা চাপকে নির্ধারণ করে। ১২০/৮০ এমএম রক্তচাপকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।

সাধারণত ঘুমিয়ে গেলে মানুষের শরীরের রুক্তচাপ ১০-৩০ শতাংশ কমে আসে। ঘুম থেকে ওঠার ঠিক আগের সময়টায় রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে ঘুম থেকে উঠেই একজন মানুষ উচ্চ রক্তচাপের মুখোমুখি হয়ে থাকেন। আর এর ফলেই একজন মানুষের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের প্রবণতা দেখা দেয়। ২০১০ সালে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, ঘুম থেকে ওঠার ৪-৬ ঘণ্টা পর উচ্চ রক্তচাপের কারণে একজন মানুষের স্ট্রোক করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সকালে উচ্চ রক্তচাপ কেন দেখা দেয়?

নানারকম কারণে একজন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পরপর উচ্চ রক্তচাপের মুখোমুখি হতে পারেন। সেগুলো হলো-

১। ওষুধ

Advertisement

অনেকসময় আমরা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওষুধ খাই। যদি এই ওষুধের পরিমাণে কোনো গরমিল হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সকালে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। ওষুধ গ্রহণের সময়-

● খুব কম ডোজের ওষুধ খাওয়া
● স্বল্পমেয়াদী বা স্বল্প সময়ের জন্য কার্যকরী ওষুধ খাওয়া
● প্রয়োজনীয় সবগুলো ওষুধ না খেয়ে কেবল একটি ওষুধ খাওয়া- ইত্যাদি কারণে এমনটা হয়ে থাকে।

অনেকে ভাবেন যে, ওষুধ ঘুমানোর ঠিক আগে নিলে ভালো কাজ করে। তবে অনেকেই পরামর্শ দেন রক্তচাপের ওষুধ রাতে একবারে না সেবন করে দিনের পুরোটা সময়ে একটু একটু করে খেতে।

২। অসুখ

নির্দিষ্ট কিছু অসুখের ফলাফলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়। সেগুলো হলো- অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, থাইরয়েডের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, লুপাস, অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপিনিয়া ইত্যাদি।

Advertisement

৩। জীবনযাপনের পদ্ধতি

অনেকসময় আপনার জীবনযাপনের নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে- ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, শরীরচর্চা না করা, পুষ্টিকর খাবার যথেষ্ট পরিমাণে না খাওয়া এবং কম ঘুমানোর জন্য এমনটা হতে পারে।

আমি কি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির মধ্যে পড়ি?

আপনার মধ্যে স্থূলতা, পরিবারের আর কারও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস, কম ঘুমানোর প্রবণতা ইত্যাদি থাকলে আপনার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ৬৫+ বয়সী মানুষেরা এই ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। আপনার চোখের সাদা অংশে রক্তের বিন্দু, তন্দ্রাভাব ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। সাধারণ রক্তচাপের পরীক্ষার মাধ্যমে ফার্মেসি বা স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকেই রক্তচাপ পরিমাপ করা সম্ভব।

এছাড়া ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, রক্ত অ মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমেও রক্তচাপের অস্বাভাবিকতা ধরা সম্ভব।

Advertisement

উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনা যায় কীভাবে?

উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের জন্য অসম্ভব নেতিবাচক। এর কারণে মানুষ হৃদপিণ্ডের নানাবিধ সমস্যায় ভোগা থেকে শুরু করে মৃত্যুবরণও করতে পারে। এর সম্পূর্ণ কোনো প্রতিকার নেই। তবে রক্তচাপের পেছনে থাকা কারণ দূর করে, শরীরচর্চা করে জীবনযাপন পদ্ধতিকে ইতিবাচক করে, ধূমপান ও মদ্যপান না করে, খাদ্যাভ্যাসকে পরিকল্পিত করে এই সমস্যাটিকে দূরে রাখা সম্ভব।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই তৈরি হওয়া উচ্চ রক্তচাপ আপনাকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে এবং নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ রাখতে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। সচেতন হোন এবং নিয়ম মেনে নিজেকে সুস্থ রাখুন।

Continue Reading
Advertisement