রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তাই জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের পাশাপাশি আগে থেকেই কিছু রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ভালো। বর্তমান সময়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোর মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার অন্যতম। ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রধান একটি কারণ ফুসফুস ক্যান্সার। তাই আগে থেকেই এ রোগ ও রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। গবেষকদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এ রোগের লক্ষণ আগে থেকে ধরতে পারা বেশ কষ্টের। অধিকাংশ মানুষই তা পারে না।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির (এসিএস) তথ্যমতে, ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত অনেকেই এর লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না। তবে এ রোগের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে, যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা উচিত। অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে একটি ওজন হ্রাস।
আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ওজন হ্রাস ক্যান্সারে আক্রান্তের একটি প্রধান লক্ষণ। ক্ষুধামান্দ্য, ইমিউনি ফাংশন, মেটাবলিজম, হরমোনে পরিবর্তনজনিত কারণেও ওজন হ্রাস পায়, যা শরীরে ক্যান্সারের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। শ্বাসকষ্ট ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। অনেকের শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি হয়। অনেকের আবার দম ফেলাতে কষ্ট হলেও কাশি হয় না। যেটাই হোক না কেন এ রকম হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী কফের কারণেও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। ধূমপানের কারণে কফ হচ্ছে মনে করে অনেকেই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। কফ দীর্ঘস্থায়ী হলে বা কফের সঙ্গে শ্লেষ্মা বা রক্ত গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অতিরিক্ত ক্লান্তি ফুসফুস ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ। এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে শরীরে লৌহ রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায়। রক্তের এ লৌহ কণিকাগুলো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে এর পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আর রক্তশূন্যতার কারণে পুরো শরীরে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। ফলে ক্লান্তি অনুভব হয় শরীরে। অধিক ক্লান্তি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে ঘাড়, বুক, ব্যাক পেইন—এ উপসর্গগুলো অনুভব করতে পারে না। সবসময় যে এগুলো ক্লান্তি বা দুর্বলতার কারণে হয়, তা নয়। ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও এ রকম ব্যথা হতে পারে। কণ্ঠস্বর কর্কশ বা ফোঁসফোঁস আওয়াজ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কফ বা কাশির কারণে এ রকম হয়ে থাকে। তবে দুই বা তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে হবে।
ফুসফুসের টিউমার হলে কণ্ঠস্বরের স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে, যে কারণে কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়। এ লক্ষণগুলোকে সাধারণত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলোর কোনো একটি লক্ষণ যদি কেউ বুঝতে পারেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হলো ধূমপান। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্যমতে, ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ।
ধূমপানের কারণে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুর হার ৮০-৯০ শতাংশ। ১৫-৩০ শতাংশ ধূমপানকারীরা ধূমপান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় এ রোগে বেশি মারা যান। ধূমপানের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করা, বংশগত কারণ—এসবের জন্যও ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে। ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এ কারণে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করতে পারা জরুরি। যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, এর চিকিৎসাও তত দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়। প্রাথমিক ধাপে চিহ্নিত করতে পারলে অনেক সময় এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, নতুবা মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।