ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগের ভয়াবহতা এখন অনেক বেশি। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হূদরোগ, ক্যান্সারসহ বেশকিছু রোগকে দীর্ঘমেয়াদি রোগ ধরা হয়। এগুলোকে নন-কমিউনিকেবল রোগও বলা হয়। বর্তমানে কমিউনিকেবল ডিজিজের তুলনায় এসব নন-কমিউনিকেবল রোগে মানুষের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। দীর্ঘমেয়াদি রোগের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ অন্যতম একটি। শরীরে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে এটি। উচ্চরক্তচাপের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। এটা হূদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি নষ্ট করে ফেলে। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেকেই ওষুধ সেবন করে থাকেন। কিন্তু ওষুধ সেবনের ফলে পা ব্যথা, মাথা ঘোরা, অনিদ্রার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যাদের রক্তচাপ আছে তাদের জন্য ভালো খবর হলো, ওষুধ নয়, জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে উচ্চরক্তচাপ কমাতে পারেন। প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে উচ্চরক্তচাপ কমানো যায়, চলুন জেনে নিই।
পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
উচ্চরক্তচাপ কমাতে পটাশিয়ামসমৃদ্ধ ফল এবং সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কলা পটাশিয়ামের একটি প্রধান উৎস। তবে আলুতে কলার চেয়েও বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। এছাড়া মিষ্টি আলু, টমেটো, কমলার জুস, মটরশুঁটি, হানিডিউ—এগুলোতেও প্রচুর পরমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। এসব খাদ্য থেকে আপনি দিনে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
সোডিয়াম কম গ্রহণ করা
যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তাদের সোডিয়াম কম খেতে হবে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ ১৫০০ মিলিগ্রামের নিচে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। রুটি, পিত্জা, রোল, স্যুপ, স্যান্ডউইচ—এ খাবারগুলোয় অধিক পরিমাণে লবণ থাকে। তাই যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তাদের এ খাবারগুলো কম খাওয়াই ভালো।
ডার্ক চকোলেট
মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তনালিকে শিথিল এবং রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অস্ট্রেলিয়ান বিশ্লেষকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ডার্ক চকোলেট সিস্টোলিক রক্তচাপকে ৫ পয়েন্টে এবং ডায়াস্টলিক রক্তচাপকে ৩ পয়েন্টে নামিয়ে আনতে সহায়তা করে। তবে হ্যাঁ, উচ্চরক্তচাপ কমাতে ডার্ক চকোলেটকে প্রধান কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। মন ভালো থাকলে এক টুকরো কেকের পরিবর্তে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ডিক্যাফ কফি পান
ক্যাফেইনমুক্ত অর্থাৎ ডিক্যাফ কফি পান করতে হবে। ডিক্যাফ কফিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উচ্চরক্তচাপের পেছনে ক্যাফেইনের ভূমিকা নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে। ২০০-৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন (এক বা দুই কাপ পরিমাণ কফিতে পাওয়া যায়) সিস্টোলিক রক্তচাপকে ৪ মিমিএইচজি এবং ডায়ালস্টিক রক্তচাপকে ৬ মিমিএইচজিতে বৃদ্ধি করে। এ কারণে ক্যাফেইনমুক্ত কফি পান করতে পারেন।
এক গ্লাস দুধ পান
ডেইরি অথবা সয়া—আপনার পছন্দ। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করুন। দুধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা নিয়ন্ত্রণ
অনেকেই ঘুমের মধ্যে নাক ডেকে থাকেন। নাক ডাকা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এর কারণে রক্তচাপ কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। যদি আপনার উচ্চরক্তচাপ থেকে থাকে এবং ঘুমের মধ্যে আপনি নাক ডাকেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাক ডাকা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন।