আগামী ৮ এপ্রিল থেকে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) ও দেশের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রবিবার (২১ মার্চ) সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপো-সিএমএসডি’র নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের কবে নাগাদ দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক্রমে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে যেন করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়, সেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রথম ধাপে যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে, আগামী ৮ এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার জন্য সবাই টিকাকার্ডে দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাবেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। যাদের প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করেই পরবর্তী টিকা কার্যক্রম প্রসারিত করা হচ্ছে।’
তবে করোনা সংক্রমণের বর্তমান ঊর্ধ্বগতিতে কঠোর পদক্ষেপের যে স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, সেটা যেন কঠোরভাবে পালন করা হয়, সেদিকে জোর দিচ্ছি, বলেন তিনি।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘অত্যাবশ্যকীয় ছাড়া চলাচল সীমিত রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকেই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।’
বর্তমান সময়ে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং সেটা ইউকে ভ্যারিয়েন্টের জন্য কিনা, জানতে চাইলে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘করোনাভাইরাস যেকোনও বয়সের যেকোনও মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।’
ইউকে ভ্যারিয়েন্ট যতটা বেশি নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে আমরা আমাদের জীবনাচরণ কীভাবে পালন করছি, তবে অবশ্যই ইউকে ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও বিকল্প নেই।’
বর্তমান সময়ে টিকা দেওয়ার সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ বছর। এ বয়স আরও কমিয়ে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত ৪০ পর্যন্ত থাকবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যারা আছেন, তাদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা নেই। এই তালিকার সবাইকে যখন টিকা নিশ্চিত করা হবে, তখন বয়সসীমা আবারও নামিয়ে নিয়ে আসবো।’
৪০-এর বেশি এবং অগ্রাধিকার তালিকাতেই প্রায় ৪ কোটি মানুষ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বলা হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার জন্য। এরইমধ্যে যাদের টিকার আওতায় নিয়েছি, তাদের নিশ্চিত করার পর বয়সসীমা নামিয়ে আনা হবে।’
তিনি জানান, ভ্যাকসিন এসেছে, টিকা নিচ্ছে মানুষ। টিকা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বর্তমান সময়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কেন প্রশ্নে অধ্যাপক সেব্রিনা বলেন, ‘যেকোনও পরিস্থিতিতেই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা পূর্ব শর্ত। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক সময় তার শৈথিল্য দেখা যায়।
এবং সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে এটা একটা বড় কারণ বলে আমরা মনে করি। এরইমধ্যে মাস্কের ব্যবহার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের ধরন একেবারে স্বাভাবিক অবস্থার মতো ফিরে যাচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনও বিকল্প নেই। টিকা দেই না দেই, মাস্ক পরতে হবে, সঠিকভাবে পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস, চর্চা করে করোনাকে প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
এখন করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কেবল বাংলাদেশেই নয়, পুরো পৃথিবীতেই তাই। নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই, বলেন অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা।
টিকার পরবর্তী চালান আসছে ২৬ মার্চ
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকার পরবর্তী চালান কবে আসবে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘২৬ মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আমরা আশা করছি, তার সফরের সঙ্গে বা তার পরপরই সেরাম থেকে পরবর্তী চালান পাবো। তবে মার্চের চালান এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও আসতে পারে, এমনটা হতে পারে।’