স্বাস্থ্য সংবাদ
মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে অজ্ঞ বেশির ভাগ মানুষ, প্রচারও নেই
সারাদেশে মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সরকারিভাবে দেওয়া নম্বরগুলো থেকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। বেশির ভাগ ফোনই বন্ধ। চিকিৎসকদের এই নম্বরগুলো ব্যবহারের বিধান থাকলেও হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, এমনকি আয়াদেরও এই ফোন ধরতে দেখা গেছে। তবে যাদের জন্য এই সেবা, সেই সাধারণ মানুষ এ […]
সারাদেশে মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সরকারিভাবে দেওয়া নম্বরগুলো থেকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। বেশির ভাগ ফোনই বন্ধ।
চিকিৎসকদের এই নম্বরগুলো ব্যবহারের বিধান থাকলেও হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, এমনকি আয়াদেরও এই ফোন ধরতে দেখা গেছে। তবে যাদের জন্য এই সেবা, সেই সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে এখনো তেমন কিছু জানে না। ফলে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার একটি উদ্যোগ প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে ফোনগুলো সচল রাখতে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। তবে খুব বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবা: ২০০৯ সালের ১ মে বর্তমান সরকার মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কার্যক্রম প্রকল্প শুরু করে। দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা হাসপাতালগুলোয় গ্রামীণফোনের একটি বিশেষ নম্বর দেওয়া হয়। কথা ছিল, এসব নম্বরে সরাসরি ফোন করে রোগীরা সেবা পাবেন। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোনগুলো কিনতে এককালীন ৩০ লাখ টাকা খরচ করা হয়। ফোনপ্রতি প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ রাখা হয়।
বন্ধ থাকছে অনেক নম্বর: গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, টাংগাইল, ফরিদপুর, সিলেট, চাঁদপুর, নাটোর, জামালপুরের জেলা হাসপাতাল এবং বেশ কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফোন করে নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, তাঁদের জন্য নির্ধারিত নম্বরটি একজন চিকিৎসক হারিয়ে ফেলেছেন। নতুন নম্বরের জন্য ঢাকায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ফোন ধরেন না: অনেক নম্বর সচল থাকলেও কেউ সেগুলো ধরেন না। ফরিদপুরের ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সদরপুরের নম্বরগুলোয় ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেনি। নগরকান্দার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুনীল চক্রবর্তী জানান, তিনি ফোনসেটটি বাসায় রেখে এসেছিলেন, তাই ধরতে পারেননি। নাটোরের বাগাতিপাড়া, সিংড়া; সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ওই সব উপজেলার নম্বরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে একাধিকবার ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন আবার কয়েক দফা ফোন করা হলেও কেউ ধরেনি।
চিকিৎসক নন, অন্য কেউ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন অফিস চলাকালে যেকোনো একজন চিকিৎসক কল রিসিভ করে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেবেন। অফিস সময়ের পরে একজন চিকিৎসকের কাছে মোবাইল ফোনটি থাকার কথা। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক ফোনই হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, সেবিকা বা আয়ারাও ধরছেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফোন করলে ধরেন স্বাস্থ্য সহকারী। নাটোরের বড়াইপাড়া এবং গুরুদাসপুরের স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, ফোনগুলো সাধারণত তাঁদের কাছেই থাকে।
হিসাব নেই: মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে দৈনিক কত জন ফোন করছেন, সেই হিসাব একটি নিবন্ধন বইয়ে থাকার কথা। তবে দেশের কোথাও এই পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বেশির ভাগ মানুষই মোবাইল ফোনে এই স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি জানেন না। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাতটি গ্রামের বিভিন্ন পেশার ২৭ ব্যক্তিকে এই সেবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কিছুই বলতে পারেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, গণমাধ্যম, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, হাটবাজার—এসব মাধ্যমে মোবাইল ফোনের নম্বরটি প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের) পরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি হাসপাতালের জন্য ভিন্ন নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনকে এ ব্যাপারে প্রচারণার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। লিফলেট বিতরণও চলছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে আরও প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
