Connect with us

স্বাস্থ্য সংবাদ

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে ব্যাপকভাবে

■ ইহেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি ডেস্ক তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা রোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ বিষয়ে আইন আছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ করাটাই হচ্ছে কঠিন কাজ। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লোকবল বাড়ানো হলে এ বিষয়ে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রহুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। […]

Published

on

■ ইহেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি ডেস্ক

তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা রোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ বিষয়ে আইন আছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ করাটাই হচ্ছে কঠিন কাজ। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লোকবল বাড়ানো হলে এ বিষয়ে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রহুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সমাদৃত এবং চিকিত্সা ক্ষেত্রে এর অবদান অবিস্মরণীয়। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, এর অপব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষমতা কোনো কোনো জীবাণু ধ্বংসের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে।

ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী মানুষ যত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় কৃষি, পোল্ট্রি বা পশুপালনে। যদি অতিদ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্টের বিস্তার থামানো না যায় তাহলে পরবর্তীতে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কোনো কাজ করবে না। তিনি আরও বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গাইডলাইন করা দরকার। সর্বোপরি একটি জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল নীতি প্রণয়ন করাও প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার সম্পর্কে চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাক্টেরিয়া নির্মূলে ছররা গুলি এবং গুলির কাজ করে। কিছুসংখ্যক চিকিত্সকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি পাখি শিকার করতে ছররা গুলি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু একটি বাঘ মারতে যদি ছররা গুলি ব্যবহার করা হয় তবে যিনি মারছেন তারই ক্ষতি হবে। ঠিক তেমনি চিকিত্সক যদি ব্যাক্টেরিয়া চিনতে না পারে ওষুধ দেয় তবে তার অ্যান্টিবায়োটিক হবে ছররা গুলি ব্যবহারের মতো। তবে এর জন্য একটি কঠোর নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। সূত্র জানায়, দেশের ২০টি উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোর এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৩৫ ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়া হয়। আর এই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় ২ থেকে ৩ দিনের জন্য। কিন্তু এই ওষুধ দেয়ার পর রোগীকে যে তারিখে পুরো মাত্রার ওষুধ নিতে আসতে বলা হয় সে তারিখে তাদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই আসেন না। ফলে ওই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়।ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ইকোলাই ব্যাক্টেরিয়াটি সাধারণত ডায়রিয়া ও পেসাবের ইনফেকশনে হয়ে থাকে। এই ব্যাক্টেরিয়া নির্মূলের জন্য সিপ্রোফ্লুক্সাসিলিন খুব ভালো কাজ করত। কিন্তু রোগীরা সঠিক মাত্রায় না খাওয়ায়, অবহেলা, অসচেতনতা এবং চিকিত্সকের ভুল ব্যবস্থাপত্রের কারণে এই অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্ট বাড়ছে। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, সিপ্রোফ্লুক্সাসিলিন, সেফটাজেরিন, সেফট্রিক্সন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো বর্তমানে শতকরা ৫০ ভাগ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, চিকিত্সা ক্ষেত্রে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক রিজার্ভে রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ইমিপেনেম, মেরোপেনেম, এমিকাসিম, নেটিলমাইসিন ও ভেন্টমাইসিন। এসব অ্যান্টিবায়োটিক সচরাচর ব্যবহার না হলেও কিছু চিকিত্সক এই ওষুধগুলোর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। যার ফলে এখান থেকেও শতকরা ১০ ভাগ রেজিস্ট্যান্ট হয়েছে বলে গবেষণায় বেরিয়ে আসে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান আমার দেশকে জানান, সম্প্রতি দেশের ৪টি হাসপাতালে এই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ওই ৪টি হাসপাতাল হলো—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দেশের আরেকটি স্বনামধন্য হাসপাতাল (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। ওই হাসপাতালগুলো থেকে ১৫শ’র বেশি রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনাগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্ত, পেসাব, গলার লালা ও পুঁজ। এই নমুনাগুলো থেকে ১১ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায়। ব্যাক্টেরিয়াগুলো হলো—ইকোলাই, স্টেফাইলো কক্কাস, ওরিয়াস, সুডোমনাস, ক্ল্যাপসিয়েলা, সালমোনেলাটাইটি, অ্যাসিনেটোব্যাক্টর, অ্যান্টারোব্যাক্টেরিয়াসি, স্টেপটো কক্কাস পায়োজন, প্রোটিয়াস। দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ভয়াবহভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অকার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে তৈরি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়া (নতুন ব্যাক্টেরিয়া)। দেশের বৃহত্ ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেড় সহস্রাধিক রোগীর নমুনা নিয়ে ১১টি ব্যাক্টেরিয়াকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। এই ব্যাক্টেরিয়াগুলোতে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি অকার্যকর হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। যারা খাচ্ছেন তারাও সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। আর চিকিত্সকদের মধ্যেও অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ও রোগের নাম জানলেও কোন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোন ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল করা হবে সেই ব্যাক্টেরিয়ার নাম জানেন না। ফলে ওই ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল না হয়ে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হচ্ছে। অকার্যকারিতা রোধে সচেতনতা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

Advertisement
Continue Reading
Advertisement