Connect with us

স্বাস্থ্য সংবাদ

শেষ হলো আইএসওএফএস আয়োজিত ফিস্টুলা নির্মূলে আন্তর্জাতিক সম্মেলন

Published

on

২০৩০ সালের মধ্যে নারীদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুই দিনব্যাপি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা সার্জন্স (আইএসওএফএস) আয়োজিত এই আসর শেষ হয় আজ শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর)।

২০৩০ সালের মধ্যে মহিলাদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের আহ্বান জানানো হয় এই ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টুলা সার্জন্স (আইএসওএফএস) সম্মেলনে।

তিনদিনের এই সম্মেলন গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) শুরু হয়। নবমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এটি। এবার ৩৫টি দেশের ১৬৭ জন আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীসহ ৫০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন।

এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য প্রসূতি ফিস্টুলা নির্মূলের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলোচনা এবং জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা।

এই আয়োজনের প্রথম দিনে আন্তর্জাতিক প্রসূতি ফিস্টুলা ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা নির্মূলের জন্য বৈশ্বিক রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ফোরাম ও প্যানেলে অংশগ্রহণ করেন।

Advertisement

এর আগে ওজিএসবি হাসপাতালে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর কনফারেন্স পূর্ববর্তী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ফিস্টুলা সার্জনগণ অংশগ্রহণ করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভার্চুয়ালি বার্তা দিয়ে ফিস্টুলা সার্জনদের অনুপ্রানিত করেছেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে অধ্যাপক সোয়েবা আকতার বলেন, ইউএনএফপিএ ২০০৩ সাল থেকে ফিস্টুলা নির্মূল বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত জোরালো ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালও এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিশেষভাবে মামস ইন্সস্টিটিউট ফিস্টুলা নির্মূলে অনেক কাজ করছে। এই পর্যন্ত ৪৯টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেছে। এছাড়াও ডিএমসিএইস, ল্যাম্ব হাসপাতাল, হোপ হাসপাতাল বিশেষভাবে কাজ করছে।

নারীদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি জটিল শারীরিক অবস্থা, যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল প্রসবের কারণে নারীদের মূত্রনালী বা পায়ুপথের মধ্যে অস্বাভাবিক যোগাযোগের সৃষ্টি করে। এর ফলে রোগীরা মূত্র বা মল নিঃসরণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং সমাজের কাছে অপমানিত হন। এটি সাধারণত গরীব, প্রত্যন্ত এবং স্বাস্থ্য সেবা সংকটাপন্ন এলাকায় বেশি দেখা যায়। বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিশেষত আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু অঞ্চলে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ নতুন ফিস্টুলা রোগী তৈরি হয়।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি গুরতর স্বাস্থ্য সংকট, যা নারীদের জীবনকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্ত নারীরা শুধু শারীরিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং অনেক সময় সমাজ ও পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, তাদের শীর্ষস্থানীয় পদ থেকে বিতাড়িত হতে হয় এবং নির্যাতনের শিকার হন।

Advertisement

এ সময় ফিস্টুলা নির্মূলে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। অনেক দেশে, বিশেষত উন্নয়নশীল এবং কম আয়ের দেশে, ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসা সেবা এখনও সীমিত। ফিস্টুলার কারণে নারীরা একদিকে যেমন শারীরিক সমস্যায় ভোগেন, অন্যদিকে তারা মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার হন। ফলে, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে পুনঃপ্রবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Continue Reading
Advertisement