বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় শনিবার পালন করা হয় আন্তর্জাতিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস বা ফার্স্ট এইড ডে। সে হিসেবে আজ শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ২০০০ সাল থেকে এই দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের সূচনা ঘটায়। প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে জীবন বাঁচায় এবং প্রাত্যহিক জীবনে নানা সংকট থেকে রক্ষা করে সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়েই এই ভাবনার উদ্ভব।
ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কমিয়ে আনা। এই দিন পালনের মূল লক্ষ্য হলো সবার সামনে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণকে তুলে ধরা। এ জন্য ফার্স্ট এইড বক্সের কিছু উপকরণের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। আমাদের দেশে ফার্স্ট এইড বক্স পরিচিত হলেও প্রশিক্ষণ বা সেই জরুরি মুহূর্তে করণীয় বিষয়গুলো খুব একটা পরিচিত নয়।
যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তা কখনো কখনো সুফল বয়ে আনে বা কারও জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে কারও ভালো জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ থাকলে সে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোনো অসুস্থতা বা আঘাতের পর করণীয় ঠিক করতে পারে, যা জীবন রক্ষা করতে পারে।
বাড়িতে একটি ফার্স্ট এইড বক্স থাকলে তা কাজেই লাগবে।ফার্স্ট এইড বক্স হলো একটি বহনযোগ্য বক্স। এতে অনেক কিছুই থাকতে পারে। যেগুলো নিয়ে প্রাথমিকভাবে ছোটখাটো দুর্ঘটনার মোকাবিলা করা যাবে। যাতে একজন মানুষ কোনোভাবে আহত বা হঠাৎ করে অসুস্থ হলে তাকে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়। কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে, এখন কী করতে হবে রোগীর জন্য। আবার কিছু থাকে, যা দিয়ে প্রাথমিকভাবে অবস্থা সামাল দিয়ে কিছু সময় পাওয়া যায়, যেটা ব্যবহার করে দুর্ঘটনায় পড়া মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
রোগীর জীবনরক্ষার পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে সমসাময়িক ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে অবস্থার অবনতি রোধ করা, সম্ভব হলে উন্নতি করাই এর লক্ষ্য। নির্ধারিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক অসুস্থ্যতার চিকিৎসা বা শুশ্রষা করে নিরাপদে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়াই প্রাথমিক চিকিৎসা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া বা পৌঁছানো পর্যন্ত যাতে রোগীর মারাত্মক কোনো অসুবিধা না হয়, শারীরীক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে, সাধারণভাবে নির্ভরতার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করাই প্রাথমিক চিকিৎসার অর্ন্তভুক্ত। একজন আহত, অসুস্থ ব্যক্তির জীবন-মরণ বহুলাংশে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর নির্ভর করে।
ফার্স্ট এইড বক্সে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
*অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ (যেমন স্যাভলন, ডেটল, পোভিডন আয়োডিন দ্রবণ)।
*অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম।
*তুলা, গজ, কাঁচি।
*ব্যান্ডেজ (ছোট ব্যান্ডেজের স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায়)।
*মাইক্রোপোর (সাদা রঙের পাতলা একটি জিনিস, যা স্কচটেপের মতো আটকানো যায়)।
*দুটি তিন কোণা বড় কাপড়।
*মাঝারি আকারের কাপড়।
*বেশ কয়েক প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন।
*প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ।
*পোড়া জায়গায় ÿলাগানোর মলম (যেমন সিলভার সালফাডায়াজিন ১% ক্রিম, যা শুধু বাহ্যিক ব্যবহার্য)।
*থার্মোমিটার।
*ক্রেপ ব্যান্ডেজ।
এ ছাড়া স্টেথোস্কোপ ও রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখা যেতে পারে।
আরও যা কাজে লাগে
*পানি *বরফ *মাঝারি আকারের শক্ত কাঠ *চিনি বা গ্লুকোজ।
দুর্ঘটনার প্রকারভেদ নানা রকম হলেও আজকের দিনে সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু সবচেয়ে প্রাণঘাতী হলো সড়ক দুর্ঘটনা। অথচ আঘাতের এক ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে নজর দিতে এ বছর বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবসের স্লোগান নির্বাচন করা হয়েছে ‘ফার্স্ট এইড অ্যান্ড রোড সেফটি’—প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিরাপদ সড়ক।
গাড়িচালক, পথচারী ও সাধারণ মানুষ আমরা সবাই মিলে ট্রাফিক আইন মেনে চলে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারি। আমাদের সতর্কতা ও সচেতনতাই হতে পারে জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানের পর্দা।
প্রাথমিক চিকিৎসার ইতিহাস
প্রাথমিক চিকিৎসার ইতিহাস ১৬০ বছরেরও বেশি পুরানো। সলফ্রিনো (১৮৫৯) এর যুদ্ধে হেনরি ডুনান্ট নামে এক ব্যবসায়ী সেখানে ছিলেন ,সেখানকার হত্যালীলার সাক্ষী হন। তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মেমোয়ার্স অফ সলফ্রিনো, নামে একটি বই লেখেন , সেই বইতে ডুনান্টের ধারণার ভিত্তিতে আইসিআরসি নামক একটি স্বাধীন সংস্থা গঠনের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে সৈন্যদের যত্ন নেয়ার জন্য। পরে, তিনি রেড-ক্রসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন। উনিশ শতকে তার আবিষ্কার থেকে আজ অবধি মানুষের দুর্দশা বর্তমান। যুদ্ধের আঘাত থেকে প্রতিদিনের রাস্তায় এবং পারিবারিক দুর্ঘটনা পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিত্সা গুরুত্বপূর্ণ।