হঠাৎই আবিষ্কার করলেন, গায়ের জামাটা বেশ আঁটসাঁট। কদিন থেকেই শরীরটা বেশ ভার ভার। পরিচিত কেউ হয়তো বলে বসলেন, ‘তুমি এমন ফুলছ কেন?’ এমন পরিস্থিতির পেছনে কিন্তু দায়ী হতে পারে নানান কারণ। চিকিৎসকদের মতে, আমাদের শরীরের ৭০ ভাগই পানি! তাই আমাদের হাড়, মাংসপেশি ও নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই পানির পরিমাণ বেশি। তবে এই ৭০ ভাগ পানির চেয়েও যদি শরীরে পানি বা ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়ে যায়; তখন সমস্যা বেশি হয়।
এমনটি হলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এ সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে তার আগে জানা উচিত ওয়াটার রিটেনশনের লক্ষণ কী, আর কেনই বা শরীরে জলের আধিক্য বাড়তে পারে?
শরীর ফুলে যাওয়া মানে কিন্তু কেবল সাধারণভাবে ওজন বেড়ে যাওয়াই নয়। বরং কিছু শারীরিক সমস্যা কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও শরীর ফুলে যেতে পারে।
বেশ কিছুদিন লাগামহীন খাওয়াদাওয়া চালিয়ে গেলে কিংবা নিয়মমাফিক শরীরচর্চা না করলে ওজন তো বাড়তেই পারে। কিন্তু এসবের বাইরেও হরমোনজনিত নানা কারণে ওজন বাড়ে। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি শরীর ফুলে যাওয়ার এক অন্যতম কারণ। শরীরে স্টেরয়েডের মাত্রা বেড়ে গেলেও শরীর ফুলে যায়। দেহে যদি স্টেরয়েড হরমোন অতিমাত্রায় তৈরি হতে থাকে কিংবা যদি স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এমনটা হয়ে থাকে। শরীরে পানি জমার কারণেও শরীর ফুলতে পারে। শরীর ফুলে যাওয়ার পেছনে অস্বাভাবিক কোনো কারণ থাকলে কিছু আনুষঙ্গিক উপসর্গও দেখা দেয়। এমন নানা তথ্য জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন।
ভেবে দেখুন, এমন কোনো কারণ আছে কি না
কিছু কারণ তো জানলেন। ভেবে দেখুন, এমন কোনো কারণে আপনার শরীর ফুলেছে কি না। খুব বেশি খাবার খাচ্ছেন? কিংবা পরিমাণে কম হলেও অতিরিক্ত ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খাচ্ছেন? নাকি কায়িক শ্রম একেবারেই বন্ধ রেখে সারা দিন ডেস্কে বা ঘরে বসেই কেবল কাজ করছেন? তাহলে তো শরীর ফুলতেই পারে। মজার ব্যাপার হলো, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবার খুব কম খেলেও কিন্তু শরীর ফুলতে পারে। যদি আপনি আমিষজাতীয় খাবার একেবারেই কম গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে অপুষ্টির কারণে ঘটতে পারে এমনটা।
স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ছাড়াও কিন্তু রক্তচাপ কমানোর কিছু ওষুধ এবং কিছু ব্যথানাশক খাওয়ার কারণে শরীর ফুলতে পারে। কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার কারণেও শরীর ফুলে যায়।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাত্মক ধরনের অ্যালার্জির কারণে শরীর ফুলতে দেখা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো জিনিসের সংস্পর্শে আসার পর শরীর ফুলে যায়; এর সঙ্গে আরও থাকে ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ।
মিলিয়ে দেখুন আনুষঙ্গিক উপসর্গ
কিছু উপসর্গ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই যেমন, হরমোনের সমস্যায় ভুগলে আপনি সামান্য শীতেই অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভব করতে পারেন; কণ্ঠস্বর ভেঙে যেতে পারে, আপনার চিন্তা এবং কাজের গতি ধীর হয়ে আসতে পারে; পায়খানা কষা হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে কিছু হরমোনের সমস্যায় অস্বাভাবিক চুল গজাতে দেখা যায়, মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। যদি কারও শরীরে পানি জমে, তাহলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে; হাতে-পায়ে পানি জমলে হাত-পা নাড়াতে অসুবিধা হতে পারে। চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া কিংবা প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তনের মতো সমস্যাও নানান রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যাও হতে পারে।
করণীয়
শরীর ফুলে যাওয়ার সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলে জীবনধারায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন। খাদ্যাভ্যাস রাখুন স্বাস্থ্যকর। শরীরচর্চাও করুন। অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করুন। তবে শরীর ফুলে যাওয়া ছাড়াও অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে প্রয়োজনে আপনাকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ওষুধ সেবন শুরু করে থাকলে যে চিকিৎসকের পরামর্শে তা শুরু করেছেন, তাঁর শরণাপন্ন হোন। যদি দেখা যায়, শরীর ফুলে যাওয়ার জন্য ওষুধই দায়ী, তাহলে তিনি ওষুধের মাত্রা বা ধরন বদলে দিতে পারেন। কোনো অবস্থাতেই শরীর ফোলা থেকে নিষ্কৃতির জন্য নিজে নিজেই কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।