ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে চোখ স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে শুরুতে সঠিক চিকিৎসা নিলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর চোখের দৃষ্টি ভালো রাখা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কী?: ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের সমাজের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তবে চোখে যে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হতে পারে এ বিষয় রোগীদের মধ্যে অনেক সচেতনতার অভাব রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর একবার চোখ পরীক্ষা করার কথা বলা আছে।
এটা অনেকেই মানেন না। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণেই বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি হয়। এমন সময় দৃষ্টি সম্পূর্ণ ব্যক্তি হঠাৎ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন সময় ডাক্তাররা রোগীর চোখ অপারেশনের করলেও ভাল হওয়া সম্ভাবনা অনেকাংশ কম থাকে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কেন হয় : ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এমন একটি রোগ যা শারীরের ক্ষুদ্র রক্ত নালীকে আক্রান্ত করে। শরীরের ভিতরের পানি লিক করতে থাকে। রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এমনকি ছোট ছোট রক্ত নালীগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এই ঘটনা শুধু চোখে না। কিউনিতে হচ্ছে, মাথায় হচ্ছে। হার্টে হচ্ছে, এমনকি আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গে আক্রান্ত করছে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে চোখের যে সমস্যা হয়: ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আক্রান্ত হলে চোখের যে রেটিনা আছে, ছোট ছোট নালী থেকে পানি বের হয়ে আসতে পারে। তৈল জাতীয় কিছু হলুদ রংয়ের পানি জমা হতে পারে। রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমনকি যে রেটিনা দিয়ে আমরা ভাল দেখি সেটাকে ছিঁড়ে বাহিরে নিয়ে আসতে পারে। তখন কিন্তু অন্ধত্ব হয়। আর একটি হলো যে জায়গা দিয়ে আমরা ভালো দেখি সেই জায়গায় পানি জমতে পারে। এই সমস্যাগুলো দেখা দিলে আমাদের চোখে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ক্ষতির ফলে রেটিনা যেহেতু রক্ত পাচ্ছে না, তখন তার অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায়, অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এর মাধ্যমে নতুন রক্তনালী তৈরি হয় কিন্ত এটা ভালো রক্ত হয় না।
সমস্যা দেখা দিলে করণীয়: আমাদের করণীয় যদি কোনো ব্যক্তির ডায়াবেটিস থাকে, বছরে একবার অন্তত চোখ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। রেটিনা পরীক্ষা করা উচিত। ১০ বছরের উপরে যেসব ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আক্রান্ত হতেই পারে। এখন আমাদের দেশে এই রোগী সুচিকিৎসা দেওয়া হয়। শুধু ঢাকাতে নয় বিভাগীয় শহরগুলোতেও পরীক্ষা ও সার্জারি করা হচ্ছে।
লেখক: ডা. নুজহাত চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।