প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের শরীরের জন্য অসম্ভব ক্ষতিকর। এই তথ্য খুব একটা নতুন বা অবাক করার মতো কিছু নয়। গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা দেখেন যে, এই আলট্রা-প্রসেসড ফুড শুধু আমাদের ওজন বাড়ায় না। একই সঙ্গে আরও বেশ কিছু সমস্যার সাথেও এটি আমাদের শরীরকে পরিচিত করে দেয়। কিন্তু এই গবেষণা মানুষের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক ছিল।
প্রাথমিক বিতর্ক
মানুষের শরীরে প্রক্রিয়াজাত খাবার কেমন প্রভাব ফেলে সেটা নিয়ে সবসময়েই বিতর্ক ছিল। এই খাবারগুলো একজন মানুষের শরীরে স্থূলতা, ক্যানসার থেকে শুরু করে মৃত্যুও এনে দিতে পারে। সাধারণত, গবেষণার কাজে মানুষকে নয়, ইঁদুরকে ব্যবহার করা হয়। তাই এ নিয়ে বিতর্ক গড়ে উঠেছে যে, ইঁদুরের শরীরের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন প্রভাব রাখছে ঠিক একই প্রভাব মানুষের শরীরে রাখবে কি না। এই বিতর্কের জের ধরেই এবার মানুষের শরীরে প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রভাব গবেষকেরা মানুষের মাধ্যমেই লক্ষ্য করেন।
বিস্ময়কর তথ্য
গবেষণায় ১০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ স্বেচ্ছাসেবককে এনআইএইচ ক্লিনিক্যাল সেন্টারে মোট ২৮ দিনের জন্য রাখা হয়। এই সময় একদলকে প্রক্রিয়াজাত খাবার দেওয়া হয়। অন্য দলটিকে সাধারণ ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহ এভাবে কাটানোর পর জায়গা বদল করে নেওয়া হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষ দুই সপ্তাহ স্বাস্থ্যকর এবং দুই সপ্তাহ ধরে অস্বাস্থ্যকর খাবার সুযোগ পান। এ সময় তারা যত খুশি খেতে এবং পান করেন। গবেষণা ৪ সপ্তাহে শেষ হয়।
গবেষণার ফলাফল দেখে গবেষকেরা বেশ অবাক হন। এতে দেখা যায় যে, প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলেও মানুষের ওজন খুব বেশি বাড়েনি। যে গতিতে প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে একজন মানুষের শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ, চর্বি ইত্যাদি বাড়ার কথা ছিল, তার কিছুই এখানে দেখা যায়নি।
প্রতিদিন ৫০৮ ক্যালোরি বেশি খেয়েও সপ্তাহ শেষে তাদের ওজন মাত্র শূন্য দশমিক ৯ কিলোগ্রাম বাড়তে দেখা যায়। সেটাও শুধু বডি ফ্যাটের আদলে। খাবার বদলে নিলেই এই ফ্যাট ঝরে যেতে দেখা যায়। কিন্তু, কেন এমন হলো?
গবেষকদের মতে এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। সেগুলো হলো-
১। খাবার খাওয়ার সময় ও গতি
সাধারণত আমরা যদি দ্রুত খাবার খাই সেক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ক পেট ভরে গিয়েছে সেটা বোঝার আগেই আমরা অনেক বেশি খেয়ে ফেলি। গবেষকেরা জানান যে, খাবার এই গতির ভিন্নতার কারণে এমনটা হতে পারে। আপনি যদি কম ক্যালোরি ধীরে ধীরে খান এবং বেশি ক্যালোরি দ্রুত খান, সেক্ষেত্রে খাবার সময় এক থাকলেও পরিমাণ বেড়ে যায়। ক্যালোরি বেড়ে যায় এবং ওজন বাড়ে-কমে।
২। খাবারের উপাদান
প্রক্রিয়াজাত খাবার যারা খেয়েছেন তাদের খাবারে বেশিরভাগটাই ছিল চর্বি আর শর্করা। অন্যদিকে, এই স্থান পূরণ করতে অন্যদেরকে বেশি বেশি আমিষ খেতে দেওয়া হয়। ব্যাপারটা এমন নয় যে, আমিষ খাওয়া খারাপ। কিন্তু খাবারের ধরনের এই ভিন্নতাও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তারা।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণাটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করা হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে-
কিছু মানুষকে গবেষণাগারে, নির্দিষ্ট স্থানের মধ্য থেকে খাবার খেতে হয়েছে। সাধারণত, একজন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায়, ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের পাশাপাশি খাবার খেয়ে থাকে। তাই, একজন মানুষকে সাধারণ জীবনে রেখেই তার ওপরে এই পরীক্ষা চালানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
এছাড়া, কোনো মানুষের শরীরে প্রক্রিয়াজাত খাবার কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা তার আর্থিক ক্ষমতা, অবস্থান এবং মানসিক অবস্থার (ইচ্ছা-অনিচ্ছা) ওপরে নির্ভর করে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার কতটুকু একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাওয়াটা নিরাপদ সেটা জানতে হলে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে গবেষণা করতে হবে। পরবর্তী সময়ে এমন গবেষণাও করা হবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে। সেই পর্যন্ত একটু বেছে, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। সুস্থ থাকুন।