ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীতে সয়লাব ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো। চলতি বছরের সাত মাসে রেকর্ডসংখ্যক ১০ হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব রোগীকে সামাল দিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তবে এ জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। কিছু কিছু বিষয় জানা থাকলে এ জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব। আসুন জানি, ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : নিজের ঘর নিজেই পরিষ্কার করুন। ঘরের কোথাও আবদ্ধ পানি রয়েছে কি না দেখে নিন। থাকলে ধ্বংস করুন। বাড়ির সামনের রাস্তায়, কোণায়-কোণায় কোথাও খানা-খন্দ রয়েছে কি না দেখুন। থাকলে ধ্বংস করুন। টায়ার, জেরিক্যান, খোলা পাত্র থাকলে নষ্ট করুন। ওসব জায়গায় পানি জমেই সেখানে এডিস মশা হয়। এডিসের প্রজনন ক্ষমতা যত উচ্চই হোক, প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হলে তো নির্বংশ হতে সময় লাগবে না। রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন। গায়ে মাখার কিছু ওষুধও পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। দিনে-রাতে মশারি টাঙান। যতভাবে নিজেকে রক্ষা করা যায় করুন।
২. আতঙ্কিত নয়, চাই সতর্কতা : সতর্ক হোন, আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কিত হলে করণীয় কাজটি ভুল হয়ে যাবে। ডেঙ্গুর শারীরিক লক্ষণ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। লক্ষণ মিলিয়ে আসলে জ্বর আসে না সব সময়। এই আউটব্রেকের মৌসুমে জ্বর এলেই, মানে জ্বরের প্রথম দিনেই ডাক্তারের কাছে যাবেন। সিবিসি ও ডেঙ্গু এনএসওয়ান পরীক্ষা করবেন। ডেঙ্গু এনএসওয়ান এক থেকে তিন দিনের ভেতর পজিটিভ থাকে। এর সেনসিটিভিটি ৬৬ থেকে ৭০ ভাগ। ৩০ ভাগ ডেঙ্গু হবার পরও নেগেটিভ দেখাতে পারে। তাই চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিন।
৩. স্যালাইন : ডেঙ্গু হলেই শিরায় স্যালাইন দিতেই হবে এমন নয়। মুখে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি বা খাবার স্যালাইন খেতে পারলে শিরায় না দিলেও চলবে। তবে শক সিনড্রমের হিসাব আলাদা। বমি, পাতলা পায়খানা হলেও বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে তখন শিরায় স্যালাইন নিতে হতে পারে।
৪. হাসপাতালে ভর্তি কতটা জরুরি : ডেঙ্গু হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে তাও না। প্রাইমারি কেয়ার সেন্টার বা আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের চেম্বারে গেলেই চলবে। তিনি রক্তের রিপোর্ট, শারীরিক পরীক্ষা, ব্লাড প্রেসার, পালস ইত্যাদি পরীক্ষা করে তবেই সিদ্ধান্ত দেবেন ভর্তি হবেন কি হবেন না। নিজে নিজে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন না।
৫ . রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া: ‘প্লাটিলেট কমে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী শকে চলে যায়’ এ রকম প্রচারণায় বিশ্বাস করবেন না। ফেসবুকে যা দেখবেন তাই বিশ্বাস করবেন না। অমুক প্রফেসর বলেছেন বলে যেগুলো প্রচার হচ্ছে সেগুলোও না।
৬. প্লাটিলেট অযথা ভীতি নয় : প্লাটিলেট নিয়ে অযথা ভীত হবেন না। প্লাটিলেট কাউন্ট ডেঙ্গুর প্রাথমিক ধারণা করতে সহায়তা করে। এর বেশি কিছু নয়। প্লাটিলেট ভালো থাকা বা খারাপ থাকা দিয়ে রোগীর ভালো-মন্দ বা রোগের তীব্রতা নির্ধারণ করা যায় না। ডেঙ্গু শক সিনড্রম একদম ভিন্ন জিনিস। প্লাটিলেট কম-বেশির সঙ্গে এর তেমন সম্পর্ক নেই।
৭. প্রেসার,পালস, হিমাটোক্রিটও জরুরি : ডেঙ্গুর প্লাটিলেট শরীরে দেওয়া খুব প্রচলিত ট্রেন্ড হলেও আসলে খুব কম ক্ষেত্রেই এটি লাগে। দিলেও কাজে লাগে কি না সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ ব্যপারে ডাক্তারকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। প্রভাবিত করবেন না। প্লাটিলেট কমে গেলেই আতঙ্কিত হয়ে এটি দিচ্ছেন না কেন বলে পীড়াপীড়ি করবেন না। প্রেসার,পালস, হিমাটোক্রিট বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৮. শক সিন্ড্রোম : ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম খুব জটিল একটি পর্যায়। আইসিইউতে ম্যানেজ করা উচিত। লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস সব দিকেই সমস্যা হতে পারে। সব কিছু পরীক্ষা করে মনিটর করতে হয়। হিসেব করে শিরায় ফ্লুইড দিতে হবে। তারপরও কেউ কেউ মারা যেতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে।
৯. জ্বর কমে যাওয়ায় শেষ নয় : জ্বর কমে যাওয়ার পরই মূলত ক্রিটিক্যাল ফেইজ শুরু হয়। তাই জ্বর কমলেই ভালো হয়ে গেল সব কিছু এটা মনে করবেন না।