সাধারণত মস্তিষ্কের রক্তনালীর দুর্ঘটনা থেকেই স্ট্রোকের সমস্যা হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয় বা হ্রাস পায় তখন মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন পায় না। যার ফলে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয় বা মারা যায় বলে স্ট্রোক হয়।
স্ট্রোক :
কোন কারণে মস্তিষ্কের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়া কে স্ট্রোক বলে ।
স্ট্রোক দুই ধরণের কারণে হয় :
১) হেমরাজিক স্ট্রোক- মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ঘটলে।
২) ইস্কেমিক স্ট্রোক -মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত।
স্ট্রোকের উপসর্গ :
১) কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হওয়া।
২) হঠাৎ মুখ, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া।
৩) হঠাৎ কথা বলতে ও বুঝতে সমস্যা হওয়া।
৪) প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া।
৫) ঘুম ঘুম ভাব হওয়া।
৬) হঠাৎ করেই এক বা দুই চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া ।
স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যা :
১) শরীরের এক পাশ অথবা দুই পাশ অবশ হয়ে যাওয়া ।
২) মাংসপেশীর টান প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যাওয়া ,পরে আস্তে আস্তে টান বেড়ে যায় ।
৩) হাত ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা থাকতে পারে ।
৪) হাত ও পায়ের নড়াচড়া সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কমে যেতে পারে।
৫) হাটা-চলা, উঠা-বসা, বিছানায় নড়াচড়া কমে যেতে পারে।
৬) নড়াচড়া কমে যাওয়ার ফলে চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে।
৭) চোখে দেখতে অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে।
৮) দৈনন্দিন কাজ করতে সমস্যা হতে পারে।
৯) উৎপাদনশীল কাজ করতে সমস্যা হতে পারে।
১০) স্মৃতি শক্তি লোপ পেতে পারে।
১১) মনোযোগ এবং বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পেতে পারে।
কাদের স্ট্রোক বেশি হয় :
পুরুষ এবং মহিলা সমান ভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় ,কিন্তু পুরুষদের মহিলাদের চেয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ।
১) উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
২) ধূমপায়ী হলে।
৩) বয়স সাধারণত ৫৫বছরের বেশি হলে ( যে কোন বয়সেই স্ট্রোক হতে পারে )।
৪) মোটা ও অধিকতর ওজন।
৫) অতিমাত্রায় মাদক সেবন করলে।
৬) জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
৭) ইতিপূর্বে একবার স্ট্রোক করে থাকলে।
৮) পরিবারে স্ট্রোক রোগী থাকলে ।
৯) হার্ট এ সমস্যা থাকলে ।
১০) ডায়াবেটিক থাকলে ।
স্ট্রোক হলে করণীয় :
স্ট্রোকের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা মাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি করুন। স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যা গুলো দূরনকরে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
অকুপেশনাল থেরাপি :
অকুপেশনাল থেরাপি এমন একটি চিকিৎসা সেবা মূলক পেশা যা একজন ব্যাক্তিকে তার শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বনির্ভর জবিন যাপনে সক্ষম হতে সাহায্য করে। বিভিন্ন থেরাপিউটিক মডেলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের সেন্সরি, মোটর, পারসেপশন, কগনিটিভ, সোশ্যালাইজেশন ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেএে কাজ করে থাকেন।
অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা:
১) সঠিক পদ্ধতিতে ঘুমানোর উপায় অনুশীলন।
২) স্প্লিন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে হাতকে সঠিকভাবে রাখা।
৩) স্প্লিন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে হাতের লেখা প্রশিক্ষণ।
৪) নিজে নিজে খাবার খাওয়ার থেরাপি।
অকুপেশনাল থেরাপির মাধ্যমে একজন রোগীর শারীরিক উন্নতির সাথে সাথে আক্রান্ত অংশের ব্যবহারিক প্রয়োগ, অনুভূতি ও বোধগম্য উপলদ্ধিতার উন্নতি এবং একই সাথে রোগীর সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের দৈনন্দিন কাজে নিযুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়।