ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন
বর্তমান বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ক্রিকেট শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে এবং বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাত্রা বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য খেলার মতো ক্রিকেট খেলায়ও খেলোয়াড়রা খেলা প্রদর্শন করতে গিয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। কেউ হয়তো সুস্থ হয়ে খেলায় ফিরে আসতে পারেন। কেউ কেউ বারবার আক্রান্ত হয়ে বা প্রথমেই গুরুতর আঘাত পেয়ে খেলা থেকে বিদায় নেন।
প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে শৌখিন খেলোয়াড়রা ক্রিকেট ইনজুরিতে বেশি ভোগেন। ক্রিকেট খেলায় সাধারণত স্ট্রেইন (পেশি ইনজুরি), স্প্রেইন (লিগামেন্ট ইনজুরি), ফ্র্র্যাকচার (হাড় ভাঙা) ও ব্রুইসিং (রক্ত জমা) ধরনের ইনজুরি হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক ক্রিকেটারদের মাঝে উর্ধ্বাঙ্গ, নিম্নাঙ্গ ও মাথার আঘাত বেশি পরিলক্ষিত হয়। কিশোর খেলোয়াড়রা মাথা, মুখ, আঙ্গুল ও হাড়ের ইনজুরিতে ভোগে। মাউথ গার্ড ব্যবহার না করলে বলের সরাসরি আঘাতে দাঁত ও মাড়ি ভেঙে যেতে পারে। ফিল্ডিং ও বোলিং করার সময় ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ইনজুরি হয় পায়ে (লেগ) এবং এ ধরনের ইনজুরি হয় স্ট্রেইন (পেশি ইনজুরি) প্রকৃতির। ফাস্ট বোলাররা সাধারণত উরুর সামনের (কোয়াড্রিসেফ) ও পেছনের (হ্যামস্ট্রিং) পেশির স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তারা দৌড়ানোর সময় গোড়ালি ও হাঁটু ইনজুরিতে ভোগে। হাঁটু ও গোড়ালির জোড়ায় ইনজুরিতে লিগামেন্টগুলো মচকিয়ে এবং আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। ব্যাটসম্যানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে বল আঘাত করার কারণে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়। এর ফলে ব্যাটসম্যানদের সাধারণত আঙ্গুলের হাড় ও পাঁজরের হাড় (রিব) ভাঙতে পারে এবং বল হেলমেটে স্ট্রাইক করলে মাথার আঘাতেও (কনকাসন) ভুগতে পারে। বলের আঘাতে ব্যাটসম্যানরা কাঁধের ইনজুরিতেও আক্রান্ত হয়। যে খেলোয়াড়রা ফিল্ডিং করেন তারা সাধারণত বাহু ইনজুরিতে ভোগেন। বোলার, ফিল্ডসম্যান বা ব্যাটসম্যান যে কেউ ব্যাক স্প্রেইনে (কোমর ব্যথা) ভুগতে পারেন। আঘাতে জোড়ার আবরণ, লিগামেন্ট ও মেনিসকাস আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে জোড়া অস্থিতিশীল হয়। কখনো কখনো জোড়া স্থানচ্যুত হওয়ার উপক্রম হয় বা স্থানচ্যুতি হয়। এতে জোড়ায় ব্যথা অনুভূত হয়, জোড়া ফুলে যায় (বিশেষ করে হাঁটুর জোড়া) এবং খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বোলারদের কাঁধের জোড়ায় ইনজুরির ফলে হাত উপরে তুলতে এবং বল থ্রো করতে অসুবিধা হয়। ইনজুরির তীব্রতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) ওপর নির্ভর করে খেলোয়াড়দের খেলায় ফিরে আসা ।
খেলায় ইনজুরি কমিয়ে আনতে বা প্রতিরোধে উপযুক্ত কলা-কৌশল লব্ধ করতে হবে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও কৌশল এবং সাপোর্ট বা গার্ড পরিধানে ইনজুরি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। জোড়া ও পেশি নমনীয় এবং শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়ামে ইনজুরির প্রবণতা কমে যায়। খেলা শুরুর আগে পেশি ও জোড়ার স্ট্রেসিং বা ওয়ার্মআপ একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ। হাড়, জোড়া ও পেশির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য সিস্টেমের (যেমন হৃদয় ও রক্তনালী, ফুসফুস ও বিপাকীয়) শক্তিশালী সমন্বয় থাকতে হবে। ইনজুরি হলে এর তীব্রতা যথাযথভাবে নির্ণয় করে, উপযুক্ত চিকিৎসা (কনজারভেটিভ বা আথ্রর্োস্কোপিক) ও রিহেবিলিটেশন করলে খেলোয়াড় দ্রুত খেলায় ফিরে আসবে।
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন
ট্রমা ও আর্থ্রোস্কোপিক স্পেশালিস্ট, ফোন : ০১৭৪৬-৬০০৫৮২।