Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

সুস্বাস্থ্যের জন্য সহজ ব্যায়াম হাঁটা

ডা. মুনতাসীর মারুফবহুকাল ধরেই চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা মেনে আসছেন, হাঁটাই সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম Walking is the king of the exercise। সব বয়সের মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী এ ব্যায়ামটি সবচেয়ে কম খরচে শারীরিকভাবে সবচেয়ে ভালো থাকার অন্যতম উপায়।জন্মের এক বছরের মধ্যেই শিখে নেয়া এ ব্যায়ামটি ঘরে-বাইরে যে কোনো জায়গায় করা যায়, ব্যক্তির শারীরিক মতা অনুযায়ী এর তীব্রতা […]

Published

on

ডা. মুনতাসীর মারুফ
বহুকাল ধরেই চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা মেনে আসছেন, হাঁটাই সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম Walking is the king of the exercise। সব বয়সের মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী এ ব্যায়ামটি সবচেয়ে কম খরচে শারীরিকভাবে সবচেয়ে ভালো থাকার অন্যতম উপায়।
জন্মের এক বছরের মধ্যেই শিখে নেয়া এ ব্যায়ামটি ঘরে-বাইরে যে কোনো জায়গায় করা যায়, ব্যক্তির শারীরিক মতা অনুযায়ী এর তীব্রতা বাড়ানো-কমানো যায়, উপযুক্ত পোশাক এবং এক জোড়া ভালো জুতো ছাড়া এর জন্য আর কোনো অতিরিক্ত ব্যয়েরও প্রয়োজন পড়ে না।

ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে নিয়মিত হাঁটার স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা অনেক।

হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর সুস্থতা
হৃদযন্ত্রের প্রধান কাজ রক্তনালীর সহায়তায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ করা এবং রক্তের ‘বিশুদ্ধতা’ অর্থাৎ অক্সিজেন-কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অনুপাতের ভারসাম্য রক্ষা করায় সহায়তা করা। গবেষকরা বলেন, নিয়মিত হাঁটার ফলে হৃদযন্ত্রের কর্মমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদযন্ত্র স্বল্প চেষ্টায় দেহে অধিক পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে। এতে করে রক্তবাহী ধমনীর ওপরও চাপ কম পড়ে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটা অনেকটা উচ্চ-রক্তচাপরোধী ওষুধের মতোই কাজ করে। এছাড়া হাঁটার ফলে রক্তে ‘খল কোলেস্টেরল’ নামে পরিচিত ‘লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ কমে যায়। এই ‘খল কোলেস্টেরল’ পরিমাণে বেড়ে গেলে তা ধমনীর গায়ে জমা হয়ে রক্তনালীকে সঙ্কুচিত করে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে, হার্ট অ্যাটাকসহ অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমেরিকায় প্রায় ৭২ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত তিন ঘণ্টা অথবা দৈনিক আধঘণ্টা করে নিয়মিত হাঁটেন, তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ব্যায়াম-বিমুখদের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।

হাড়ের য় ও ভাঙন রোধ
গবেষণায় দেখা গেছে, রজঃনিবৃত্তি-পরবর্তী বয়সে যেসব মহিলা প্রতিদিন অন্তত এক মাইল করে ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে হাঁটেন, তাদের হাড়-ঘনত্ব কম-সচল মহিলাদের তুলনায় বেশি। হাঁটার ফলে যেমন হাড় য়ের প্রবণতা হ্রাস পায়, তেমনি আর্থ্রাইটিসসহ হাড়ের নানা  রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। কমে যায় বয়সকালে সহজেই কোমরের হাড় ভাঙার ঝুঁকিও।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন
হাঁটার ফলে ভালো লাগার অনুভূতি জাগে মনে, মানসিক চাপ বোধ হয় কম। এ সময় শরীরে এন্ডোরফিন নামের রাসায়নিকের ক্রিয়া বেড়ে যায় বলে ঘুম হয় আরামদায়ক। মেডিসিননেটডটকম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন হাঁটার ফলে বিষণœতার উপসর্গ ৪৭ শতাংশ হ্রাস প্রায়। অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা সপ্তাহে অন্তত দেড় ঘণ্টা হাঁটেন, তাদের বোধশক্তি সপ্তাহে ৪০ মিনিটের কম হাঁটা মহিলাদের তুলনায় বেশি।

Advertisement

স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, দৈনিক এক ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়।
যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিস প্রিভেনশন প্রোগ্রামের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১শ ৫০ মিনিট হাঁটা আর দৈহিক ওজন ৭ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫৮ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়।
নারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে সপ্তাহে অন্তত দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা হাঁটেন, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি, যারা হাঁটেন না তাদের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্যান্সার স্টাডিতে প্রকাশিত আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাঁটার ফলে খাদ্যনালীর নিম্নাংশের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিক সমতা বৃদ্ধি
স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার এবং নিয়মিত হাঁটা, দীর্ঘমেয়াদি ওজন নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি। হাঁটার মাধ্যমে শারীরিক সমতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও সবলতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত হাঁটা প্রয়োজন।
তালিকা এভাবে বাড়তেই থাকবে। হাঁটার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে সুফল পাওয়ার জন্য হাঁটার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলা বাঞ্ছনীয়। যেমনÑ
ঘুম থেকে উঠেই হাঁটা দেওয়া উচিত নয়, ফ্রেশ হয়ে অল্প পানি পান করে হাঁটা শুরু করা ভালো।
যে কোনো ধরনের হাঁটাই উপকারী। তবে প্রকৃত সুফল পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন আধঘণ্টা করে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন মধ্যম গতির হাঁটার উপদেশ দেন। সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলেছেন, প্রতি মিনিটে ১০০ কদম হাঁটার লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
শুরু করুন ধীরে ধীরে। প্রথম দিন হয়তো ১০ থেকে ১৫ মিনিট। পরবর্তীতে হাঁটার সময় ও গতি বাড়ান।
মধ্যম বা দ্রুতগতির হাঁটা থেকে হঠাৎ থেমে যাবেন না। ৫ থেকে ১০ মিনিট ধীরে হেঁটে শীতল হোন।
হাঁটার সময় পায়ের সঙ্গে হাতও সচল রাখুন। হাত পায়ের সমান্তরালে রাখুন।
পেট যতটা সম্ভব ভেতর দিকে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে হাঁটুন। চর্বি কমাতে পা একটু উঁচু করে হাঁটুন।
হাঁটার সময় রিল্যাক্স থাকুন। ইতিবাচক বিষয় চিন্তা করুন।
প্রতিদিন একই রাস্তা ধরে না হেঁটে নতুন নতুন স্থানে হাঁটতে পারেন।
ওয়াকম্যানে গান শুনতে শুনতে বা সঙ্গীসহ গল্প করতে করতে হাঁটতে পারেন। এতে করে হাঁটতে একঘেয়ে লাগবে না।
হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠলে সঙ্গে সঙ্গে পানি পান করা উচিত নয়। কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পান করুন।
সকাল বেলা হাঁটার সময় না পেলে যে কোনো সময় হাঁটতে পারেন। বাড়িতে যতটা সম্ভব হাঁটতে চেষ্টা করুন।
কোনো ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন, দেখে নিন কতটুকু হাঁটা আপনার জন্য উপযোগী।

Continue Reading
Advertisement