জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে দুই দফায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী সালমান হোসেন বলেন, ‘দেশের জন্য কতশত মানুষ নিজের ক্ষতি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এখন যদি সেই দেশটারই ভালোভাবে পুনর্গঠন না হয়, এই কষ্ট রাখার কোনো জায়গা থাকবে না। তখন আমরা নিজের ক্ষতির সঙ্গে এই আফসোস নিয়ে আরও বেশি মানসিক সংকটে পড়বো।’
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ‘বিপ্লব-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক আলোচনায় অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সালমান হোসাইন এ কথা বলেন।
দেশ পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি না করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আহত শিক্ষার্থী বলেন, ‘পা একটা চলে গেছে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। আরেকটা দেওয়ার জন্য আমরা হাজারো ভাই প্রস্তুত আছি। অন্য কারও লাগবে না, আমাদের যে আহত ভাইয়েরা আছেন, তারাই দেবেন। কিন্তু সামনে এগুনোর (পুনর্গঠন) পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।’
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার নাগরিকদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই হয় তো আমরা ভাবছি, এই অন্তর্বর্তী সরকার বেশি দিন থাকবে না। সুতরাং অধিকার আদায়ের সময় এখনই। তাই তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন করছেন।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা চূড়ান্ত মানসিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এই সংকটে আছেন। তাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনবে সরকার।
এ সময় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আন্দোলনের পর থেকে অনেক মা-বাবাও আতঙ্কে আছেন। আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হওয়া অনেক মেয়ের পরিবার ভয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার সকালে কেবিনেট মিটিংয়ে আহত ও শহীদ পরিবারে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনবে সরকার।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি সেমিনার আয়োজনের প্রেক্ষাপট, মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন রিসোর্স ও তার সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আটটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায় মানসিক স্বাস্থ্যের অন্যতম ও জটিল একটি রোগ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, যেটাকে সংক্ষেপে ‘পিটিএসডি’ বলা হয়। তীব্র শোক বা মানসিক আঘাত থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে স্বাভাবিক জীবনের সবকিছু ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যার ঝোঁক পর্যন্ত দেখা দেয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা যে পক্ষেরই হোক, তাঁরা চিকিৎসা পাবেন। তবে গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে আহত ব্যক্তিদের অর্ধেককে এখনো সহায়তার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা নিশ্চিত করছি, তাঁদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও সার্বিক প্রয়োজনে পাশে থাকব।’
আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির সভাপতি তানসেন রোজ। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের ৭৫ ভাগ মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম. মুজাহেরুল হক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চরকির সিইও রেদওয়ান রনি এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চাইল্ড হেল্পলাইনের পরিচালক মো. মোহাইমিন চৌধুরী।