দুটি ওষুধ কোম্পানির তৈরি অ্যান্টিবডির মিশ্রণ হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে এই চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল বলে বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই চিকিৎসায় করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য শরীরে অ্যান্টিবডি দেওয়া হয়।
বুধবার যুক্তরাজ্যের এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। এতে বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ওইসব রোগী যাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি রেজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সুইজারল্যান্ডের রোশ এর তৈরি অ্যান্টিবডির মিশ্রণ ‘দারুণ কার্যকর’ প্রমাণিত হয়েছে।
দুই অ্যান্টিবডির এই ব্যয়বহুল ককটেল থেরাপিকে বলা হচ্ছে রেজেন-কোভ। চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালের ফল বলছে, এই থেরাপি কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকিও ৭০ শতাংশ কমাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের বেলায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের জরুরি অনুমোদন দিয়েছে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি ৩ জন রোগীর মধ্যে ১ জনের সেরে ওঠায় ভূমিকা রাখছে এই চিকিৎসা। আর প্রতি ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৬ জনের জীবন বাঁচিয়েছে এটা।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেলায় এটি অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। ২৮ দিনের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগী, যাদের শরীরের নিজস্ব অ্যান্টিবডি রোগ প্রতিরোধে সাড়া দিচ্ছে না (সেরোনেগিটিভ রোগী), তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি একপঞ্চমাংশ কমাতে পারে এই অ্যান্টিবডি থেরাপি।
গবেষকরা হিসাব করে বলছেন, এই চিকিৎসা প্রতি ১০০ জন সেরোনেগিটিভি রোগীর বেলায় অন্তত ছয় জনের প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছে।
তবে যাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়, তাদের বেলায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি কতটা কার্যকর তা এখনও বোঝা যায়নি।
এই ট্রায়ালের যুগ্ম প্রধান গবেষক মার্টিন ল্যান্ডরে বলেন, “কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করবে কিনা সেটা নিয়ে খুব, খুবই সংশয়ের মধ্যে থাকতে হয়।
“যদি প্রাকৃতিকভাবে আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি না হয়. তবে এই অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে আপনি সত্যিই উপকার পাবেন।”
রেজেন-কোভ ব্যবহারে সেরোনেগিটিভ রোগীদের বেলায় হাসপাতালে থাকার মেয়াদও কমে আসে। এছাড়া, ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনীয়তাও অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব হয় বলেও জানান ল্যান্ডরে।
রেজেনেরন কর্তৃপক্ষ এর আগে দাবি করেছিল, তাদের চিকিৎসা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেলায় যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক ফলাফল দেখাচ্ছে। তাই তারা তাদের ট্রায়াল অব্যাহত রাখতে চায়। যুক্তরাজ্যের এই গবেষণা তাদের সেই দাবিকে আরও জোরাল করেছে।