Home প্রধান খবরগৃহস্থালির বায়ু দূষণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩.৫ মিলিয়ন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে

গৃহস্থালির বায়ু দূষণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩.৫ মিলিয়ন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর

গৃহস্থালির বায়ু দূষণ নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে একটি জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ। এটি বেশ কয়েকটি কারণে ঘটে থাকে। তবে, রান্নার জ্বালানির ব্যবহারে যেমন- পিট, কাঠ এবং কয়লা সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাপী প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মানুষ রান্নার জন্য অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের বেশিরভাগই নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাস করে।

ফলস্বরূপ, গৃহস্থালির বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৩.৫ মিলিয়ন অকালমৃত্যু ঘটে, তার প্রায় সবই নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে। অনিরাপদ জ্বালানির ব্যবহার থেকে শিশুদের শৈশবকালীন বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতা, যেমন: নিউমোনিয়া, অন্তঃসত্ত্বা বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা, অকাল জন্ম, এবং কম ওজনের জন্ম ইত্যাদি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এমনও প্রমাণ রয়েছে যে, গর্ভাবস্থার জটিলতার ক্রমবর্ধমান হারের সাথে যুক্ত, যা মায়েদের হাসপাতালে ভর্তি এবং সিজারিয়ান সেকশন ডেলিভারি আরো বাড়িয়ে দেয়।

সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী ও দুইজন শিক্ষক এর ‘রান্নার জ্বালানি থেকে গৃহস্থালির বায়ু দূষণ এবং বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর সাথে এর যোগসূত্র’ নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে- বাংলাদেশের প্রায় ৮০% মায়েরা অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে থাকে। গ্রামীণ এলাকার জন্য এই হার আরো বেশি (৯২%)। যার মধ্যে ৪৫% কাঠ এবং ২৭% কৃষি জ্বালানি ব্যবহার করে। এটি অল্পবয়সী শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে যা বাংলাদেশে বর্তমান পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর উচ্চ মৃত্যুহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করার জন্য ৭৯% মায়েরা মাঝারিভাবে এবং ১.২১% মায়েরা উচ্চভাবে হাউজহোল্ড এয়ার পলিউশনের সাথে সম্পৃক্ত।

এই গবেষণায় পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এক মাসের কম বয়সী শিশু যাদের মৃত্যুহার ১০০০ এ ২৫%, এক বছরের নিচের বয়সী শিশু যাদের মৃত্যুহার ৩৫%, এবং পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার ৩৮%।

এছাড়াও এই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুদের মায়ের বয়স ২৫-৩৫ এর মধ্যে এবং যারা দরিদ্র তাদের শিশুদের তিন স্তরেই মৃত্যুহার বেশি। যেসব মায়েরা নিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের তুলনায় যারা অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের শিশুদের (০-১ মাস বয়সী) মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ৩.৪৪ গুন বেশি এবং ১২ মাস বা ১ বছরের নিচে বয়সী শিশুদের মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ২.৩৯ গুন বেশি।

এই গবেষণার আরো একটি ফলাফল হচ্ছে, যেসব মায়েরা হাউজহোল্ড এয়ার পলিউশনের সাথে সম্পৃক্ত নয় তাদের তুলনায় যারা উচ্চভাবে সম্পৃক্ত তাদের শিশুদের (০-১ মাস বয়সী) মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ৪.৩৩ গুন বেশি এবং ১২ মাস বা ১ বছরের নিচে বয়সী শিশুদের মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ২.০৫ গুন বেশি। সাধারণত রান্নার কাজে জড়িত এবং রান্নার সময় প্রায়ই মায়েদের সাথে তাদের ছোট বাচ্চারা থাকে।

গবেষকরা জানান, গত এক দশক আগে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত বাংলাদেশের পূর্ববর্তী গবেষণায় এটির সত্যতা পাওয়া গেছে এবং কম ওজনের জন্মের এবং প্রি-টার্ম জন্মসহ অন্যান্য প্রতিকূল ফলাফল দেখা গেছে।

এই গবেষণায় আরো দেখা গেছে, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষিত, মাঝারিভাবে গণমাধ্যমের সংস্পর্শে আসা ও দরিদ্র মায়েদের বাচ্চাদের মধ্যে নবজাতক, এক বছরের নিচের শিশু এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার বেশি দেখা গেছে এবং এই মৃত্যুহার মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের মধ্যে বেশি। পাঁচ বছরের কম বয়সী এই তিন স্তরের শিশুদের মৃত্যুর একটি উচ্চতর অংশ গ্রামীণ এলাকা, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের মায়েদের শিশুদের মধ্যেও পাওয়া গেছে।

গবেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে নবজাতক যাদের বয়স এক মাসের নিচে এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ব্যবহৃত অনিরাপদ জ্বালানি। নিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানোর জন্য প্রশাসনিক কৌশলগত উদ্যোগগুলোকে জাতীয় স্তরের নীতি এবং নির্ধারণে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। মানবস্বাস্থ্যের উপর ব্যবহৃত অনিরাপদ জ্বালানির বিরূপ প্রভাব, বিশেষ করে শিশু স্বাস্থ্য, মায়েদের তাদের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের রান্নার জায়গায় না আনতে অনুপ্রাণিত করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে MDG উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সময়কালে পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুহার কমাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। SDG-3 এর লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী (প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ২৫%) এবং নবজাতকের (১০০০ জীবিত জন্মে ১২%) মৃত্যুর হার হ্রাস করা।

গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণার ফলাফল SDG এর লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

গবেষক দলে ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের ৫ শিক্ষার্থী- মো. বাদশা আলম, সুপ্রিয়া আচার্য্য, এসএম.আশিক মাহমুদ, জেসমিন আক্তার তানিয়া, মো. মোস্তারিদ আলী খান এবং দুই জন শিক্ষক- মো. সাইফুল ইসলাম, ড. মো. নুরুজ্জামান খান।

You may also like