Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

তামিম ইকবালের হার্টে এত দ্রুত রিং পরানো সম্ভব হলো কীভাবে

Published

on

হার্টের রিং কি এবং কেন?
হার্টের রিং হচ্ছে একটা মেটালিক বা ধাতব টিউব, যেটা ব্লক হওয়া রক্তনালিতে পড়িয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বুকে হওয়া ব্যথা কমে আসে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। এসব রিং আমেরিকা ও ইউরোপে তৈরি হয়।

সারা দুনিয়াতে দুই ধরণের রিং পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে ওষুধ মেশানো। আরেকটি হচ্ছে ওষুধ মেশানো ছাড়া। ২০০০ সালের আগে ওষুধ ছাড়া রিং ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ওষুধ মেশানো হার্টের রিং ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে এসব রিং আমদানি করে আনা হয়।

কোনো ব্যক্তির রক্তনালিগুলো যদি ৭০ শতাংশ ব্লক হয়, তাহলে তাদের দেখিয়ে ও অনুমতি নিয়ে হার্টে রিং পড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। কারও একটা রক্ত নালি ব্লক হলে একটা রিং পড়ানো হয়, কারও দুইটা ব্লক হলে দুইটা রিং পড়ানো হয়, আবার কারও তিনটারও প্রয়োজন হয়।

প্রয়োজন ছাড়া রিং পড়ানো হয় না। অবশ্যই প্রয়োজনে রিং পড়ানো হয়। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সময় ক্রিটিকাল অবস্থায় যদি চিকিৎসক মনে করেন যে এখন একটা রিং পড়িয়ে অবস্থা ভালো করা সম্ভব। তাহলে ডাক্তার একটি রিং এখন পড়িয়ে বাকিগুলো পড়ে পড়ানো হয়।

হার্টে রিং পরাতে কতক্ষণ লাগে
হার্ট অ্যাটাক হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অ্যানজিওগ্রাম করিয়ে রোগীর আক্রান্ত রক্তনালিতে রিং পরিয়ে দেওয়ার (স্টেন্টিং) প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আদতে খুব একটা সময় লাগে না, যদি রোগীর জটিলতা অনেক বেশি না হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এটিই হার্ট অ্যাটাকের আদর্শ চিকিৎসাপদ্ধতি। তবে আমাদের দেশে অনেক রোগীকেই হাসপাতালে নিয়ে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে অ্যানজিওগ্রাম এবং স্টেন্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকে না।

Advertisement

ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরীর কৃতিত্ব
তামিম ইকবালকে অ্যাম্বুলেন্সে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার সময় মোহামেডানের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী তাঁর বুকে পাঞ্চ করছিলেন বলে জানা গেছে। জরুরি মুহূর্তে এই কাজটিই রোগীর জীবন বাঁচায়। হঠাৎ করে কেউ কোনো সাড়া না দিলে দ্রুততম সময়ে কার্ডিও–পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) শুরু করতে হয়। বুকে পাঞ্চ করা এই প্রক্রিয়ারই অংশ। হৃৎপিণ্ড নিঃসাড় হয়ে গেলে সিপিআরের মাধ্যমে তা আবার সক্রিয় করার সম্ভাবনা থাকে। সফল সিপিআরে এভাবেই রোগীর জীবন বেঁচে যায়। ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী সময়মতো সঠিক কাজটিই করেছিলেন।

চিকিৎসকেরা যা করেছেন
সাভারের নবীনগরের কেপিজে হাসপাতালে নেওয়ার পর তামিম ইকবালকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে অ্যানজিওগ্রাম ও স্টেন্টিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। দ্রুততম সময়ে হৃৎরোগবিশেষজ্ঞ মনিরুজ্জামান মারুফ সেখানকার প্রশিক্ষিত দল নিয়ে অ্যানজিওগ্রাম, অ্যানজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্টিং সম্পন্ন করতে পেরেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত করোনারি কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তামিম ইকবাল।

সিপিআর জেনে রাখা জরুরি কেন
জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবালের এই ঘটনা থেকে আবারও এই সত্য সামনে চলে এল, জীবন বাঁচাতে সিপিআর শিখে রাখা উচিত সবারই। এর জন্য কিন্তু মেডিকেল পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন নেই। এই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন যে কেউ। তাতে আপনজনসহ চেনা–অচেনা বহু মানুষের জীবন বাঁচানো যায়।

আর হার্ট অ্যাটাকের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে চিকিৎসক দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দূরে কোথাও রওনা হওয়ার চেয়ে নিকটস্থ যে হাসপাতালে অ্যানজিওগ্রাম ও স্টেন্টিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত। তাতে মূল্যবান সময় বেঁচে যায়। বাঁচে অমূল্য প্রাণ।

Advertisement
Continue Reading
Advertisement