কল্পনা করুন আপনার সামনে প্রিয় কোনো সিনেমা বা নাটকের দৃশ্যে নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য চলছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেখানে যৌন সম্পর্কের পর দুজনেরই অর্গাজম বা যৌনতৃপ্তি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু এটা মোটেও বাস্তব চিত্র না।
কারণ বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে যৌন মিলনের পর পুরুষের তুলনায় নারীদের অনেক কম অর্গাজম হয়।
একে অর্গাজম গ্যাপ বা অর্গাজম ঘাটতি বলা হয়। আর বৈজ্ঞানিকভাবে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বিষয়ক তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
৫০ হাজার মানুষকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট ৯৫ শতাংশ পুরুষদেরই সহবাসের সময় সাধারণত বা সবসময় অর্গাজম হয়ে থাকে, যেখানে মাত্র ৬৫ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে।
গবেষণা বলছে, কিছু মানুষ বিশ্বাস করে জৈবিকভাবেই নারীদের অর্গাজম কঠিন হওয়ার কারণে এমনটা ঘটে। তবে যদি এমনটাই হতো, তাহলে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে নারীদের অর্গাজমের হার ভিন্ন হতো না।
এমনকি, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে সঙ্গীর সাথে থাকার চেয়ে একা থাকা অবস্থায় নারীদের অর্গাজম বেশি হয়।
নৈমিত্তিক বা যে কারো সঙ্গে যৌনতার তুলনায় সঙ্গীর সাথে সহবাসের সময় নারীদের অর্গাজম বেশি হয়।
১২ হাজার কলেজ শিক্ষার্থীকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কেবল ১০ শতাংশের প্রথমবার মিলনের সময় অর্গাজম হয়েছে। আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্গাজম হয়েছে ৬৮ শতাংশের।
অন্য কোনো নারীর সঙ্গে যৌন মিলনের সময়ও নারীদের অর্গাজম বেশি হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো নারীর সঙ্গে যৌন মিলনের পর ৬৪ শতাংশ উভকামী নারীর সাধারণত বা সবসময় অর্গাজম হয়।
এমন কেন হয়?
যেসব পরিস্থিতিতে নারীরা যৌন উত্তেজনা বেশি উপভোগ করে, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লিটোরাস স্টিমিউলেশন বা ভগাঙ্কুর উদ্দীপনার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
নারীর যোনির প্রবেশ মুখের উপরে থাকে ক্লিটোরাস বা ভগাঙ্কুর। এটির আকৃতি অত্যন্ত ছোট, দেখতে বোতামের মতো, যার মূল কাজ হল নারীকে যৌন মিলনকালে তৃপ্তি প্রদান করা।
বেশিরভাগ নারীরই অর্গাজমের জন্য ভগাঙ্কুরে উদ্দীপনার প্রয়োজন হয়। কেননা ভগাঙ্কুর ও শিশ্ন একই ধরনের টিস্যু থেকে তৈরি হয়।
আর উভয় অঙ্গই স্পর্শ-সংবেদনশীল স্নায়ু ও উত্তেজনা তৈরি করা টিস্যু দিয়ে পূর্ণ।
আমার কাজের জন্য আমি হাজারও নারীকে জিজ্ঞেস করেছি যে অর্গাজমের ক্ষেত্রে তাদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় কী?
মাত্র চার শতাংশ নারী বলেছে, পেনেট্রেশন বা যোনিতে শিশ্নের প্রবেশের মাধ্যমে। আর ৯৬ শতাংশ বলেছে, কেবল ভগাঙ্কুর উদ্দীপনা অথবা একইসঙ্গে উদ্দীপনা ও শিশ্ন যোনিতে প্রবেশের মাধ্যমে যৌন মিলনে তারা অর্গাজম উপভোগ করে।
যেটুকু ভগাঙ্কুর উদ্দীপনা নারীদের জন্য প্রয়োজন তা না পাওয়াই অর্গাজম ঘাটতির প্রধান কারণ।
আর যৌন সম্পর্কের আধিপত্য নিয়ে সাংস্কৃতিকভাবে দেয়া বার্তাও এতে ইন্ধন জোগায়।
অগণিত সিনেমা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বই ও নাটকে দেখানো হয় যে কেবল যৌন মিলনের মাধ্যমেই নারীরা অর্গাজমের আনন্দ পায়।
পুরুষদের জনপ্রিয় ম্যাগাজিনগুলোও কোন অবস্থানে যৌন সম্পর্ক করলে নারীদের অর্গাজম হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়।
কিছু অবস্থানের ক্ষেত্রে ভগাঙ্কুরে উদ্দীপনা গুরুত্ব পেলেও, মূল বার্তা এটিই রয়ে যায় যে যৌন সম্পর্কই কেন্দ্রীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌন কাজ।