Connect with us

প্রধান খবর

করোনাকালে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের নিরাপদ রাখতে সচেতনতা বাড়ানো জরুরী

Published

on

সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা করোনাভাইরাস। সচেতনতাই পারে একে প্রতিরোধ করতে। তাই সব সময়ের মতো শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের প্রতি অবশ্যই অধিক যত্নশীল হতে হবে এই সময়েও। সাধারণ ভাবে একজন নারীর গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। এ কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এই সময় গর্ভবতী নারীর উচিত স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত যত্ন নেয়া।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ নিয়ে চিন্তার বড় একটি কারণ হলো- যখন গর্ভবতীরা ফ্লুতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। গর্ভবতী মায়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। এছাড়াও ভ্রুণ, জরায়ূ, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গগুলো বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ফুসফুসের কিছু অঞ্চল বায়ু সঞ্চালনে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। এতে করে গর্ভবতীদের সংক্রমণের ঝুঁকির প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।

নিরাপদে থাকার উপায় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সময় সাবধান ও নিরাপদে থাকার বিকল্প নেই। সংক্রমণ এড়াতে ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে। যদি কোনো কারণে আপনি ঘর থেকে বের হন তবে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। কখনো মুখে থাকা মাস্কটি স্পর্শ করবেন না। ঘরে ফিরে কানের পাশ থেকে মাস্কটি খুলে ততক্ষণাৎ ফেলে দিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আপনাকে অন্যদের থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরে থাকতে হবে।

করোনা প্রতিরোধে গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত অনলাইন চেক-আপ করার পরামর্শ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নিলুফার সুলতানা বলেন, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ শিশু এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো সম্ভাব্য বিপদ হ্রাস করতে পর্যায়ক্রমে গর্ভবতীর চেক-আপ করা প্রয়োজন। তবে করোনার সঙ্কটের এই সময়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করলেও নিয়মিত অনলাইনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

তিনি বলেন, এই সময় হাত ভালো করে না ধুয়ে আপনার মুখ, চোখ, নাক এবং কান স্পর্শ করবেন না। যদি বারবার মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস থাকে। অবিলম্বে তা পরিবর্তন করুন। এটি গর্ভের শিশুর পক্ষেও ক্ষতিকারক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীর এবং মনকে শক্তিশালী রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। সুতরাং নিজের ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস কে বণিক বলেন, শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম। বিশেষত ০-৯ বছর বয়সের মধ্যে সংক্রমণ হয় না বললেই চলে। শিশুদের ওপর এর প্রভাব কম হলেও ওদের নিয়ে অসতর্ক হওয়ার সুযোগ নেই। করোনাভাইরাস ছাড়াও অন্য জীবাণুদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এই শিশুদের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলে ওদের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারেন পরিবারের অন্যরা। তাই ঝুঁকি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। যদিও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি খানিকটা কম, তবে যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদের ঝুঁকির মাত্রা বেশি হতে পারে।

Advertisement

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গর্ভবতী নারী এবং তাদের শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে ‘কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির সময়ে গর্ভাবস্থার পরিচর্যা’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

এতে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় দেহ এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার কারণে গর্ভবতী নারীরা গর্ভাবস্থার শেষের দিকের মাসগুলোতে খারাপভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
যেমন-
১. কারোনাভাইরাস রোগের (কোভিড-১৯) লক্ষণ রয়েছে এমন কারো সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
২. সম্ভব হলে গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন।
৩. সম্ভব হলে বাড়িতে থেকে কাজ করুন।
৪. পাবলিক প্লেস বা লোকালয়, বিশেষ করে বন্ধ বা দেয়ালঘেরা স্থানগুলোতে ছোট-বড় সব ধরনের জমায়েত পরিহার করুন।
৫. বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শ পরিহার করুন।
৬. ধাত্রী, প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবাদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন, মেসেজ বা অনলাইন সেবা ব্যবহার করুন।
৭. অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য সাবান ও পানি দিয়ে বার-বার হাত ধোয়া, ঘরে বার বার স্পর্শ করা হয় এমন স্থান, জিনিসপত্র, নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
৮. কোভিড-১৯ এর সঙ্গে মিল আছে এমন কোনো লক্ষণ নিজের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করুন। সমস্যা মনে হলে শুরুতেই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সেবা গ্রহণ করুন।
এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময় প্রসূতির মায়েদের যদি অন্য সন্তান থাকে তাহলে তারা যাতে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে না মেশে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়মিত হাত ধুতে ও নিজেদের যতœ নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. আফরোজা বলেন, গর্ভাবস্থায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যান্য ভাইরাসের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণও হতে পারে। গর্ভবতী এবং সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়েছেন (বিশেষত ২ সপ্তাহের মধ্যে), এমন মায়েদের বিশেষ সাবধানে থাকা উচিত।

Continue Reading
Advertisement