অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
ফিটনেসের সঙ্গে খাদ্যের কিসম্পর্ক? বাসায় টলমল করে হাঁটে যে শিশু বা টিনএজরা, যেই হোক, যেই পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করে, তার দিন ভালো তো যাবেই। তা খেলাধূলার মধ্যে হোক বা ক্লাশরুমেই হোক। আমরা জানি শিশুর বাড় বাড়ন ও বিকাশের জন্য চাই ভালো পুষ্টি ও ব্যায়াম। কিন্তু ইতিমধ্যে যারা বড় হয়েছে তারা, পূর্ণবয়স্ক যারা এদের ব্যাপারে কি? স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ এবং শরীরচ্র্চায় অব্যাহত আকর্ষণ ও চর্চা থাকলে সারা জীবন, জীবনের গুণগতমান উঁচুতে রেখে বেঁচে থাকা সম্ভব। এছাড়া অনেক রোগের ঝুঁকিও এড়ানো যায়। আর ফিট থাকলে যা হয় তা হলো:
০০ মনমেজাজ থাকে চনমনে, ফুরফুরে মেজাজ, কমে চাপ, বাড়ে বল শক্তি। হ্রাস পায় হূদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুকি।
০০ চেহারা থাকে সুন্দর, মন ও প্রফুলস্ন।
০০ শরীর থাকে শক্তি, ধৈর্য্যশক্তি যাতে যে কাজ করতে ইচ্ছে হয় তা সম্পন্ন হয় অনায়াসে। হাট-বাজারে এত বিচিত্র শাক-সবজি ও ফল যে হরেক কিসিমের খাদ্য খাওয়া সহজ। আর দুর্ভাগ্যবশত: খাদ্যকে আনন্দের উৎস হিসাবে এবং দেহের ভেতরের ইঞ্জিনের জন্য জ্বালানি হিসাবে অনেকে দেখেন অন্যভাবে। প্রতিবেলার খাবার যদি অংকের হিসাব কষে করতে হয়, কত গ্রাম চর্বি খাওয়া হলো, ক্যালোরি গুনে খাওয়া হলো কি, শ্বেতসার গণনার ব্যাপার হয়ে উঠে, বেলার খাবার তখন খাওয়ার আনন্দ যায় হারিয়ে। সব লোকই যে সমভাবে সৃষ্টি হয় তা তো নয়। নারীদের দেহে যে বাড়তি চর্বি, তা স্বাভাবিক ব্যাপার। স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণ ও স্তনদানের জন্য চাই শক্তির ভান্ডার। নারীর দেহে সেই ভান্ডার থাকে। তরুণী যারা শরীর চান মেদহীন, নির্ভার, এদের স্বাভাবিক রজ:স্রাব ও রজ:চক্রের জন্য যে হরমোন ভারসাম্য প্রয়োজন, তা একটু বেসামাল হয় বৈকি। বয়স যত হয় আমাদের পুরুষ ও নারী সবাই হারান কিছু পেশি, আর পেশি হলো সক্রিয় টিসু্য, যা আমাদের এনার্জির চাহিদা নির্ণয় করে। বয়সের সঙ্গে দাদু-দিদাদের ক্ষুধা কমে যায় কিনা? আমরা যদি সক্রিয় না থাকি তাহলে ক্ষয় হয় বেশি। দেহের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে হলে সুমিত খাদ্যের সঙ্গে প্রয়োজন ব্যায়াম। ৫-১০% ওজন হ্রাস করলেও অনেক লাভ, নিয়ন্ত্রিত হয় রক্তচাপ, রক্তের সুগার, ও রক্তের কোলেস্টেরল। সক্রিয় থেকে ব্যায়াম করে, এনার্জি চাহিদা মত আহার করে তো পারা যায়। যে কোনও রকমের কাজকর্ম হলেই হলো। সচল সক্রিয় হলেই হলো। দুর্বলের শরীরচর্চা হতে পারে। লাইফস্টাইল ও প্রোগ্রাম করা একটিভিটি। লাইফস্টাইল চর্চা হলো অগ্রাধিকার পাওয়ার মত বিষয়। দৈনন্দিন জীবন ধারার মধ্যে সক্রিয়তা সচলতা ঢোকালে হয়। যেমন এলিভেটর ব্যবহার না করে সিড়িঁ ব্যবহার করুন। পোস্ট অফিসে যাবেন, হেঁটে যান। নিজের বাগানের ঘাস নিজে মুড়িয়ে নিন। এসবে রপ্ত হলে প্রচলিত শরীরচর্চায় আরো অনুরাগ আসবে। যেমন সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, এরোবিকস। শরীরচর্চা যাই হোক, যা উপভোগ্য হয়ে উঠবে নিজের কাছে তত লেগে থাকা এতে সহজ হবে। বন্ধুর সঙ্গে হাঁটতে না সাইকেল চালাতে একসঙ্গে ভালোবাসেন। যা ভালোবাসেন, সেই চর্চাই হবে উপভোগ্য।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম।