নতুন ওষুধনীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এলক্ষে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছে।
নতুন ওষধনীতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যসচিব হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট নীতি ও আইনগুলোকে পর্যালোচনা করতে বিভিন্ন দপ্তরকে বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওষুধনীতিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নীতিতে মূলত প্রয়োজনীয় ওষুধ নিশ্চিত করতে এবং ওষুধের মান রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্পকে কিভাবে আরো সহায়তা করা যায় সেই বিষয়টিও থাকবে।
নতুন নীতিমালায় ওষুধের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। জনগণ যেন ভালোমানের ওষুধ পেতে পারেন, সে বিষয়টির প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যেন নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মধ্যে না ফেলতে পারে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা থাকবে।
২০০৫ সালে সরকার জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন করে। ওই নীতিটি পর্যালোচনা করে নতুন ভাবে করা হচ্ছে ওষুধনীতি। প্রথমবারের মতো ওষুধনীতি প্রণয়নের পর ২০০৫ সালেই ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধনী আনা হয়। অবশ্য সংশোধিত ওই আইনে বিদেশি ওষুধ শিল্পকে পরোক্ষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, সে সময় অবশ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওষুধ অধিদপ্তর আইনটি যুগপোযোগী করতেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। তবে একই সঙ্গে প্রণীত নীতির অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর প্রয়োগ লক্ষ করা যায়নি।
এ অবস্থায় আবার ওষুধনীতি হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এই শিল্প এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও নীতি প্রণয়নের পর থেকে গত ছয় বছরে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবহার লক্ষ করা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে যখন নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়, তখন দু’টি প্রধান বিষয় সেখানে প্রাধান্য পেয়েছিলো। এক, নতুন আইন প্রণয়ন এবং ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ (ডিআরএ) কে কার্যকর ও সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সঙ্গে এই শিল্পের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত প্রসারমান ওষুধ শিল্পের উৎপাদিত ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করতে নীতিমালা থাকাটা জরুরি। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না বলে অনেক ক্ষেত্রে মান রক্ষা হচ্ছে না।
এমন অবস্থায় নীতিমালা হালনাগাদের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন খসড়া তৈরি করতে হবে।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে খসড়া তৈরি করতে নতুন কমিটি কাজ শুরু করেছে। খসড়া তৈরি করে ওয়েব সাইটে দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ওষুধ শিল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। বর্তমানে প্রায় ৮৬টি দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করছি। তবে এই খাত থেকে আয় খুব একটা বাড়ছে না। কারণ অনেক ওষুধের মান নিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের প্রশ্ন থাকে।
তিনি বলেন, শিল্পের সহায়তার জন্য অবশ্যই নতুন নীতিমালা দরকার। একই সঙ্গে তার বাস্তবায়ন। তবে খেয়াল রাখতে হবে নীতিমালা ও আইন যাতে দেশীয় শিল্পবান্ধব হয়।
ওষুধনীতি প্রতি দু’বছর পর পর হালনাগাদ করা উচিত বলে মত দেন এই বিশেষজ্ঞ।
বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধের নিবন্ধন, উৎপাদন, বিতরণ, বিক্রয়, আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় ১৯৪০ সালের ওষুধ আইন ও ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন দ্বারা। ১৯৮২ সালের আইনটি ওই সময় সবার প্রশংসা পেয়েছিলো। কিন্তু সেই আইনটি সরকার বাস্তবায়ন করেনি।
সুত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম