জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও নগরায়ণের গতি আগামী ২৫ বছরে পৃথিবীবাসীর মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিসের (ইনসুলিন ছাড়া শুধু ওষুধ খেয়ে যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়) প্রবণতা কতটা প্রবল হবে, তা নির্ধারণ করবে। এটা আমাদের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর বয়ে আনতে পারে বলে মনে হচ্ছে না। টাইপ টু ডায়াবেটিস এরই মধ্যে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে প্রায় সব দেশেই।
বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ২ শতাংশ এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ১০২৫ সালে পৃথিবীবাসীর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এতে ভুগবে (মোট প্রায় ৩০ কোটি)। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোয়ই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগীর বাস হবে। শুধু উপমহাদেশেই ডায়াবেটিস রোগীর হার বর্তমানের মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ হবে। শিল্পসমৃদ্ধ দেশে কিছুটা বেশি দেখা গেলেও মূলত উন্নয়নশীল দেশেই ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা লক্ষণীয়। ১৯৯৫ সালে উন্নয়নশীল দেশে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ কোটি। এ সংখ্যা ১৫০ শতাংশ বেড়ে ২০২৫ সালে ২৫ কোটি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমাদের দেশে এ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অন্য অনেক দেশেই গবেষণা হয়েছে এ নিয়ে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশেরও ৩৫ শতাংশ প্রথমবারে নির্ণীত রোগী ডায়াবেটিস সম্পর্কে অসচেতন ছিল। উন্নত দেশগুলোর অন্য কয়েকটিতে অনুরূপ তথ্য পাওয়া গেছে। আর উন্নয়নশীল দেশের মানুষের সচেতনতার হার আরো কত কম হতে পারে অনুমান করতে পারেন।
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ডায়াবেটিস (টাইপ টু) হওয়ার চরিত্রও কিছুটা ভিন্ন। উন্নত দেশে মহিলাদের বেশি সংখ্যায় ডায়াবেটিসে ভুগতে দেখা যায়, আর উন্নয়নশীল দেশে পুরুষরা টাইপ টু ডায়াবেটিসে বেশি সংখ্যায় ভোগে। আগের তথ্যটি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যেরই প্রকাশ ঘটায়। যেমন_খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রম ও ব্যায়াম।
তা ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অবস্থায় কিছুটা ভিন্নতর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বা অভ্যাস দেখা যায়। আর টাইপ টু ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় ভোগার হার ও প্রাবল্যও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।
ডায়াবেটিসের উপসর্গ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস খুব ধীরগতিতে অগ্রসর হয়। অনেকের বেলায় তেমন কোনো উপসর্গও দেখা যায় না। সেজন্য যেসব দৈহিক লক্ষণ ডায়াবেটিস হওয়ার শুরুর দিকে থাকতে পারে, তার প্রতি লক্ষ রাখা উচিত। এরূপ চারটি লক্ষণ হলো_
– খাওয়ার পর পরই ঘুম পাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে দেহকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ আত্তীকৃত করার জন্য অন্য সব অঙ্গের শক্তি কাজে ব্যয় করে। এজন্য খাবার পর পর যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে তখন দেহ অবসন্ন বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়।
– চোখে খুব সামান্য হলেও ঘোলা বা ঝাপসা দেখা। রক্তে খুব বেশি গ্লুকোজ জমা হলে তা চোখের লেন্সকে টেস ধরে এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়। এতে পড়ার সময় বা পরে মাথাব্যথা হতে পারে।
– রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। তবে এটা সঠিকভাবে বলা কঠিন, কেন এমন হয়। তবে কারো দীর্ঘদিনের স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়াটা ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাসের লক্ষণ হতে পারে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
– শ্বাস-প্রশ্বাসে সব সময় নেইল পলিশ রিমোভারের মতো গন্ধ থাকা। একে এসিসিন শ্বাস বলে।
ডায়াবেটিস রোগীর বিপদ সংকেত
– শ্বাস-প্রশ্বাসে অ্যাসিটোনের উপস্থিতি (কিটো অ্যাসিডোসিস) নিঃশ্বাসে মিষ্টি গন্ধ।
– খুব দুর্বল বোধ করা ও ওজন দ্রুত কমতে থাকা।
– পায়ের আঙুলে কোথাও কালো দাগ পড়া ও অবশ বোধ করা।
– প্রস্রাবের পরিমাণ বা হার কমে যাওয়া।
– চোখের চশমার পাওয়ার ঘন ঘন পালটাতে হওয়া।
– ত্বকে ঘনঘন জীবাণুঘটিত অসুখ হলে ও ওষুধ গ্রহণের পরেও নিরাময় না হলে।
– বুক ধড়ফড় করা, গা ঘামতে থাকা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, চোখ ঝাপসা দেখা (হাইপো গ্লাইসেমিয়া)।
ডা. শাহজাদা সেলিম
বারডেম, শাহবাগ, ঢাকা