যে ওষুধে মানুষের জীবন বাঁচে, সেই ওষুধ নিয়েই চরম প্রতারণা করছে রাজধানী ঢাকার ফার্মেসিগুলো। ফার্মেসির ব্যবসায়ীরা ওষুধের মেয়াদ পার হয়ে গেলেও সেগুলো দেদারছে বিক্রি করছে। এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে মানুষের জীবন আরও মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার অভিযানের গত ছয় মাসের প্রতিবেদন তথ্য বলছে, ঢাকার ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে।
শুধু যে ঢাকার ফার্মেসিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে তা নয়, ঢাকার অনেক নামি-দামি হাসপাতালেও হরহামেশা মিলছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। যেমন সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের ক্যান্টিনে রোগীদের খাবারে তেলাপোকা এবং এখানকার ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সম্প্রতি বেলা ১১টা থেকে শুরু করে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় এ অভিযান পরিচালনা করে।
প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (উপসচিব) মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুুল জব্বার মন্ডল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার ও জান্নাতুল ফেরদাউস। তা ছাড়া মাঝেমধ্যেই ঢাকার শাহবাগ, কলেজগেট, পুরান ঢাকা মিডফোর্টসহ বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদফতর। এসব অভিযানে প্রায় সব দোকান থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করে অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানাও করে ভেজালবিরোধী টিম।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এ উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গতকাল জানালেন ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। সোমবার ফার্মগেটের খামারবাড়িতে আ. কা. মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিয়মিত বাজার তদারকির গেল ছয় মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতারণা রোধে অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশেই তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। তদারকি টিম কখনও ক্রেতা সেজে, আবার কখনও ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ফার্মেসিগুলোর কার্যক্রম নজরদারির আওতায় রেখেছে। ৭ জুন সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ পালিত হয়। এবারই প্রথম বেসরকারিভাবে দিনটি পালন করছে বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ উপলক্ষে ওইদিন থেকেই সারা দেশের সুপার মার্কেটগুলোয় সপ্তাহব্যাপী ‘ভোক্তা সেবা সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, খাদ্যপরিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বিশ্বের ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এর আর্থিক ক্ষতিও প্রচুর। আর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি কারও একক দায়িত্ব না। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাকেও সতর্ক হতে হবে।
এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়াজ রহিম, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ছাড়াও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়াজ রহিম বলেন, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যসংকট নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলেও এখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।