প্রেগন্যান্ট মায়েদের কাছ থেকে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কিত নানান ধরনের প্রশ্ন শোনা যায়। আজ সেরকমই ৮টি কমন প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন ডা. ফারহানা আহমেদ। তিনি গাইনি ল্যাপারস্কপিক সার্জারি, বন্ধাত্ব ও গাইনি ক্যান্সার সার্জারিতে দেশ ও বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিনিই প্রথম বেসরকারী পর্যায়ে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি শুরু করেন। বর্তমানে ইমপালস হাসপাতালে সিনিয়র কন্সালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি (ভ্যাজাইনাল) বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর: এই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় নরমাল ডেলিভারির সময় যে সকল নার্ভসমূহ ব্যথার অনুভূতি বহন করে সেগুলো ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে অবশ করে দেওয়া হয়, ফলে রোগী নরমাল ডেলিভারির পেইন অনুভব করতে পারে না। তবে এই সময়ে হাঁটাচলা বা অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এই ব্যথানাশক প্রক্রিয়াটির নাম এপিডুরাল এনালজেসিয়া।
কিভাবে দেওয়া হয় এবং কখন দেওয়া হয়?
উত্তর: নরমাল ডেলিভারির তিনটি স্টেজ আছে, যেমন-
প্রথমে স্টেজ: লেবার পেইন শুরু হবার পর থেকে জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলা (১০ সেমি) পর্যন্ত সময়কে প্রথম পর্যায় ধরা হয়।
দ্বিতীয় স্টেজ: জরায়ু মুখ পুরোপুরি খোলার পর থেকে বাচ্চা ডেলিভারি পর্যন্ত।
তৃতীয় স্টেজ: এ সময় গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ডেলিভারি হয়।
নরমাল ডেলিভারির প্রথম স্টেজে জরায়ুর মুখ যখন চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার খুলে যাবে এবং রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারবে না তখন এই অবশ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
এ প্রক্রিয়ায় মেরুদন্ডের ভিতরে একটি প্লাস্টিকের ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং এখান থেকে কিছুক্ষণ পর পর স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেসে ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়।
এ প্রক্রিয়ার সুবিধাগুলো কী কী?
উত্তর: প্রথমত যেসব রোগীরা নরমাল ডেলিভারির ব্যথা সহ্য করতে চাইত না তারা এখন এভাবে সহজেই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হবে । এতে নরমাল ডেলিভারির হার বেড়ে যাবে। এতে সুবিধা হচ্ছে সিজার-জনিত জটিলতা থেকে মা মুক্ত থাকবে; যেমন সিজারের জন্য কিছুটা হলেও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়, সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ব্লিডিং এবং ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা নরমাল ডেলিভারির তুলনায় বেশি থাকে। সিজারের আরো কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে অ্যাডহেশন তৈরি হওয়া অর্থাৎ পেটের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়, এছাড়াও একবার বা দু’বার সিজার হলে পরবর্তীতে আবার সিজার করার দরকার পরে। তাছাড়া, সিজারের পরে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে, অন্যদিকে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। অন্যদিকে বাচ্চা নরমাল প্রক্রিয়ায় হবার কারণে এদের শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে।
অসুবিধা গুলো কী কী?
উত্তর: ডেলিভারির দ্বিতীয় স্টেজে মা যেহেতু জোরে পুশ করতে পারে না তাই সাধারণ নরমাল ডেলিভারির চেয়ে এখানে সময় বেশি লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। তবে এই এনালজেসিয়ার কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
এপিডুরাল এনালজেসিয়া বা অবশ করনের জন্য নরমাল ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা কি কমে যেতে পারে?
উত্তর: এপিডুরালের কারণে নরমাল ডেলিভারি হবার চান্স কমে না, তবে যেকোনো নরমাল ডেলিভারির আগে থেকে ১০০ ভাগ শিওর হওয়া যাবে না যে শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হবে কিনা। অনেক সময় দেখা যায় কোন স্টেজে এসে বাচ্চা আটকে গেলে কিংবা ফিটাল ডিসট্রেস/ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হলে সিজার করার দরকার হতে পারে।
সব মায়েরাই কি এভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য উপযুক্ত?
উত্তর: যেসব মায়েদের নরমাল ডেলিভারির জন্য সিলেক্ট করা হয়, তাদের সবাই এপিডুরাল নিতে পারবেন। তবে তাদেরকে গর্ভকালীন সময়ে একবার এনেসথেসিস্ট ডাক্তারের মাধ্যমে চেকআপ করানো হয়।
এভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কী কী সুবিধা থাকা জরুরি?
উত্তর: প্রথমত, লেবার-কালীন সময়ে মা ও বাচ্চার মনিটরিং এর জন্য এক্সপার্ট ম্যান-পাওয়ার বা লোকবল থাকতে হবে। একজন অভিজ্ঞ এনেসথেসিস্ট এবং ইমারজেন্সি সিজার করার সুবিধা থাকা অবশ্য জরুরি। এছাড়াও মা ও বাচ্চার সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য সিটিজি মেশিন দরকার হয়।
ডা. ফারহানা আহমেদ
এমবিবিএস, এফসিপিএস (অবস-গাইনী)
প্রসূতী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। যোগাযোগ: 01718062132
https://www.youtube.com/watch?v=tldKLosk_rU