শীতে বয়স্কদের কষ্টের সীমা নেই। এ সময় অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এর বেশিরভাগ কারণ হলো হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোক। শীতে দেহে ফ্লুইড ওভারলোড হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেহ থেকে লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। ফলে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। রক্তনালিতে রক্ত সহজেই জমাট বেঁধে যায়। দেখা দেয় স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাক। তরুণদের রক্তনালি বেশ স্বাস্থ্যবান বলে এ সমস্যা কম দেখা দেয়।
বয়স্কদের মারা যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, শ্বাসনালির প্রদাহ। শীতে ছড়িয়ে পড়া ফ্লু থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া, যেটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও হতে পারে সিওপিডি ও অ্যাজমা। বেড়ে যেতে পারে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অসটিওআর্থ্রাইটিস ও যে কোনো জয়েন্ট পেইনের জটিলতা। ভাইরাস জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন অনেকেই। বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় একটু ঠাণ্ডায় তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য শীতের ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে বৃদ্ধদের। পরিমিত শীতবস্ত্র পরিধান করতে হবে। বুক, কান ও পা ঢেকে রাখতে হবে শীতের কাপড়ে। একটি মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা কাপড় পরলে ঠাণ্ডা কম লাগবে। কাপড়ের স্তরে স্তরে বাতাস জমা হয়ে দেহ থেকে তাপ বাইরে বের হতে বাধা দেবে। গলা ও কানে কাপড় জড়িয়ে ঘুমাতে হবে। মাথা দিয়েও কিন্তু তাপ দেহের বাইরে যেতে পারে, তাই মাফলার বা কোনো কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে ঘুমান।
বাইরে বের হলে যথেষ্ট পরিমাণে শীতের কাপড় পরুন। ঠান্ডায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। শীতের দিনে শুধু শুয়েবসে না থেকে কিছু কিছু হালকা ব্যায়াম যেমন ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করুন, হাত-পা নাড়াচড়া করুন। এতে করে শরীরে তাপ উৎপন্ন হবে। ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করুন। কুসুম গরম পানি পান করুন। গরম চা, কফি খেতে পারেন। ফলে গলায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সহজে জন্মে না। প্রতিদিন কিছু না কিছু টক ফল খান। বিভিন্ন অসুখ যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি, বিভিন্ন ধরনের জয়েন্ট পেইনের জন্য যারা আগে থেকেই ওষুধ খাচ্ছেন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ডোজ প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতে পারেন।
শীতের আগে ইনহেলার অনিয়মিত নিলেও এখন নিয়মিত নিতে হতে পারে। শীতের সবুজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেমন_ গাজর ও অন্যান্য সবজি। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার যেমন ভ্যাসলিন, গ্গি্নসারিন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল ব্যবহার করা যায়। গোসলের আগে নয়, গোসলের পর গা ভেজা ভেজা থাকতেই এগুলো ব্যবহার করুন। ডায়রিয়ামুক্ত থাকতে চাইলে বাসি খাবার খাবেন না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। ডায়রিয়া হলে প্রচুর পানীয় পান করুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
নিয়ম মেনে চললে শীতের এই সময়েও বয়স্করা সুস্থ শরীরে জীবনযাপন করতে পারবেন।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা