মানবশরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিডনি। কিডনি আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। দেহের ভেতরে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে কিডনি। এটি ভেতরের ক্ষতিকর পদার্থগুলো দেহ থেকে বের করে দেয়। এসব কারণে কিডনির প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত।
প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। খাদ্য কিডনির সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আমরা হয়তো সেসব খাবার সম্পর্কে জানি না। কিডনির জন্য ক্ষতিকর কিছু খাবার নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন:
বাদাম স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু সবসময় নয়। কিডনিতে পাথর হওয়ার জন্য বাদামের ভূমিকা রয়েছে। বাদামে এক ধরনের খনিজ থাকে, যা অক্সালেট নামে পরিচিত। এটি কিডনির ক্ষতি করে থাকে। যদি আগে কারো পাথর হয়ে থাকে, তবে বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। বাদামের পাশাপাশি অক্সালেটযুক্ত আরো খাবার যেমন আলুর চিপস, ফেঞ্চ ফ্রাইস এগুলোও খাওয়া উচিত হবে না।
আমরা অনেকেই প্রতিদিনের সকালটা এক কাপ কফি দিয়ে শুরু করি। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাফেইন পানে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সোডা এবং এনার্জি ড্রিংকও ক্ষতিকর। ক্যাফেইন হালকা ডায়াবেটিস অর্থাৎ মূত্রবর্ধক, যা কিডনির পানি শোষণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কিডনি যাতে ভালোভাবে কাজ করে, সেজন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। ক্যাফেইন রক্তপ্রবাহকে উদ্দীপিত করে রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। এটা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
দুধ, ঘি, পনির, দইসহ দুগ্ধজাত পণ্য ক্যালসিয়ামে ভরা এবং এগুলো প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এ খাবারগুলো কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি করে। যারা এরই মধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই এসব খাবার গ্রহণে বিরত থাকবেন। আর যারা এখনো সুস্থ আছেন, তারা চেষ্টা করুন এসব খাবার কম খাওয়ার। এ-জাতীয় খাবারে চর্বির পরিমাণ বেশি, যা হূদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়; আর হূদরোগ কিডনির সমস্যায় প্রভাব ফেলে। তেমনি কিডনির সমস্যা হূদরোগ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
সোডিয়াম পটাশিয়ামের সঙ্গে মিশে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে। কিডনির কার্যক্রমকে ঠিক রাখে। কিন্তু অধিক পরিমাণ সোডিয়াম কিডনির জন্য ক্ষতিকর। লবণে প্রচুর সোডিয়াম থাকে। এ কারণে বেশি লবণ খাওয়া উচিত না। দীর্ঘদিন ধরে লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি হয়, এতে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরিমিত পরিমাণে লবণ খেতে হবে।
মাংসতে প্রচুর প্রোটিন থাকে। আর প্রোটিন শারীরিক বৃদ্ধি, মাংসপেশি, মেটাবোলিজম এবং কিডনি সুস্থ রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখে। তবে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে চিকিৎসকরা উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খুব বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন না।
সুস্থ থাকতে, নিজেকে ভালো রাখতে কিডনি সুস্থ রাখা দরকার। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এ অংশটি যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে সচেতনতা দরকার। আর তাই যতটা সম্ভব উপরের খাবারগুলো কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তার মানে এটা নয় যে, খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেবেন। পরিমিত পরিমাণে এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং ভালো।