রীতিমতো মহামারির মতো ইদানীং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে ডায়াবেটিস রোগটি। একটু চিন্তা করলেই দেখবেন আপনার পরিচিত মানুষের মাঝে এমন কেউ আছেই যিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন মানুষকে অসুস্থ করে দেওয়া এ রোগটির ব্যাপারে আসলে আমরা কতটুকু জানি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে থাকে কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। অনেকেই ভাবেন ডায়াবেটিস হয়েছে মানে কেবল রোগী চিনি খেতে পারবেন না। এ ছাড়া আর কোনো বৈশিষ্ট্য নেই এই রোগের। আসলে কিন্তু তা নয়, বরং এই রোগটি এতই জটিল যে, কেবল ভুক্তভোগীই বোঝেন ডায়াবেটিস হলে কত ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে।
ডায়াবেটিসের বিভিন্ন টাইপ রয়েছে। এর মধ্যে টাইপ ওয়ান, টাইপ টু এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে। সবগুলোতেই রোগীর শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা যায়। একেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেক রকমের এবং প্রভাবও হয় আলাদা। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস কখনও টাইপ টু-তে রূপান্তরিত হয় না। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাত্রার কোনো সম্পর্ক নেই। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রোগীর অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলোকে শরীর নিজেই মেরে ফেলে। ফলে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। এটা সাধারণত ৪০ বছর বয়সের নিচে দেখা যায়। তবে যে কারও হতে পারে। বাঁচার জন্য এসব মানুষের ইনসুলিন নিতেই হয়।
আগে দেখা যেত বয়স্ক ও ভারী শরীরের মানুষেরই বেশি ডায়াবেটিস হয়। ইদানীং অনেক কম বয়সী মানুষেরও ডায়াবেটিস হতে দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে বংশগতির সম্পর্ক আছে। এর পাশাপাশি আছে জীবনযাত্রার সম্পর্ক। পেটে মেদ জমার কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ডায়াবেটিস হওয়ার পর জীবনে এর প্রভাব অনিবার্য।
যে ধরনের ডায়াবেটিসই হোক না কেন, রোগীর জীবনে আসে বেশ কিছু পরিবর্তন। যেমন আঙুল ফুটো করে ব্লাড গ্লুকোজ মাপা, মেপে মেপে শর্করা খাওয়া, ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া ইত্যাদি। গ্লুকোজ লেভেল ঠিক না থাকলে হতে পারে অন্ধত্ব, কিডনি ফেইলিওর, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং নার্ভ ড্যামেজ। জীবনের প্রতিটি বিষয়ই গ্লুকোজ লেভেল বাড়া-কমার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এ কারণে গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা রোগীর জন্য খুব কষ্টকর এবং ঝামেলার মনে হতে পারে।
শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিসের কারণে রোগী ভুগতে পারেন বিষণ্ণতায়। বার্ন আউটের সমস্যা দেখা যায় অনেকের মাঝে। অর্থাৎ রোগী নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে করেন, নিজের যত্ন নেওয়ার ইচ্ছাও চলে যায় তার মধ্য থেকে। বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিক বার্ন আউটের ঝুঁকি বেশি থাকে। ডায়াবেটিসের সঙ্গে একা যুদ্ধ করাও রোগীর জন্য কষ্টকর। এ কারণে পরিবারের সদস্যদের সাপোর্ট তার জন্য খুবই জরুরি। এতে তারা নিজের পরিস্থিতির ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। সব সময় শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হতে পারে।
ছোট ব্যাপারগুলো অনেক বড় অবদান রাখতে পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে। নিজের যত্ন নিন, প্রিয়জনের সাহায্য নিন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।