বিশ্বজুড়ে সেপসিসের কারণে পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। আর এটি রক্তের বিষ হিসেবে পরিচিত।
বছরে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ সেপসিসে মারা যাচ্ছেন। যে সংখ্যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়েও বেশি। খবর- বিবিসি বাংলার। সেপসিসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ।
তবে ধনী দেশগুলোকেও এই সেপসিস মোকাবেলায় কাজ করতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে।
সেপসিস কী?
সেপসিস গুপ্তঘাতক হিসেবেও পরিচিত। কারণ এই রোগ শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত কাজ করার ফলে এই সেপসিস হতে পারে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কেবল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে শরীরের অন্য অংশগুলোতেও আক্রমণ শুরু করে।
একপর্যায়ে মানুষের অঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। এমনকি বেঁচে থাকা মানুষকেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ও অক্ষমতা নিয়ে চলতে হতে পারে। সেপসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ। যার অর্থ বিশ্বজুড়ে বছরে যত মানুষ মারা যান, তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ এই সেপসিস।
গবেষক, সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিনা রুড বলেছেন, উগান্ডার গ্রামাঞ্চলে কাজ করেছি এবং সেপসিসের ঘটনা আমরা প্রতিদিনই দেখি।
তিনি বলেন, সেপসিসে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। আর সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০ জন শিশুর মধ্যে চারজনের সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তবে যুক্তরাজ্যের জন্য সেপসিস একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। স্পেন, ফ্রান্স এবং ক্যানাডার মতো দেশের চাইতে ব্রিটেনে সেপসিসে মৃত্যুর হারও বেশি। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে সেপসিসের কারণে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ মারা যান।
কী করবেন?
সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনার মাধ্যমে সেপসিসে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যেতে পারে।
অনেক দেশের ক্ষেত্রে সেপসিস প্রতিরোধের উপায় হলো– সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি এবং সঠিক সময় সঠিক টিকার জোগান। এ ছাড়া সেপসিস আক্রান্ত রোগীদের ভালোভাবে চিহ্নিত করা। এবং দ্রুত তাদের চিকিৎসা শুরু করা।
অ্যান্টিবায়োটিক্স বা অ্যান্টি-ভাইরাসের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সেপসিসের লক্ষণ-
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে
১. অস্পষ্ট কথা।
২. চরম কাঁপুনি বা পেশিব্যথা।
৩. সারাদিনে কোনো প্রস্রাব না হওয়া।
৪. মারাত্মক শ্বাসকষ্ট।
৫. দ্রুত হৃৎস্পন্দন এবং শরীরের তাপমাত্রা অনেক বা কম হওয়া।
৬. ত্বকের রঙ একেক জায়গায় একেক রকম বা ছোপ ছোপ দাগ।
শিশুদের মধ্যে
১. চেহারা দেখতে নীলচে বা ফ্যাকাসে হয়। ত্বকের রঙ একেক জায়গায় একেক রকম দেখায়।
২. খুব অলস থাকে বা ঘুম থেকে জাগানো কঠিন হয়ে যায়।
৩. শিশুর শরীর স্পর্শ করলে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।
৪. খুব দ্রুত শ্বাস নিলে।
৫. ত্বকে এক ধরনের ফুসকুড়ি হওয়া, যা আপনি চাপ দিলেও মুছে যায় না।
৬. হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়া বা খিঁচুনি