॥ ই-হেলথ২৪ ডেস্ক ॥ দেশজুড়ে তাপদাহ বইছে। গত মঙ্গলবার দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এ মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আকাশে মেঘ নেই; সরাসরি পড়ছে সূর্যের আলো।
তাই তাপদাহ নেই এমন জেলাগুলোতেও অসহনীয় হয়ে উঠেছে তাপমাত্রা। সহ্যসীমা অতিক্রম করায় সে তাপদাহ মানবদেহে রূপ নিয়েছে হিটস্ট্রোকে। চলতে-ফিরতে রাস্তাঘাটে অচেতন হয়ে পড়ছে মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিশেষ করে অসহনীয় হয়ে পড়েছে রাজধানীর তাপমাত্রা। দু’তিন দিন পরপরই রাতে কিছুটা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমছে না। গত এক সপ্তাহ ধরেই তাপমাত্রার চাকা ৩৫-৩৬ ডিগ্রির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
তাপদাহের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বলেন, আগামী দু’তিন দিন তাপমাত্রা আরও বাড়বে; থাকবে তাপদাহ। বিশেষ করে রাজধানীর তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
‘বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত তাপদাহ থাকবে’-আবহাওয়াবিদদের এমন তথ্যের ভিত্তিতে সে সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। তারা যে কোনো উপায়ে গরম পরিহার করে চলার কথা বলেছেন।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, গতকাল দেশের দুটি জেলায় রাজশাহী (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি) ও চুয়াডাঙ্গায় (সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি) তাপদাহ ছিল। তবে আক্ষরিক অর্থে তাপদাহ না থাকলেও অনুরূপ পরিস্থিতি ছিল অন্তত ছয় জেলায়। এগুলো হল-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর। জেলাগুলোয় তাপমাত্রা ছিল গড়ে প্রায় ৩৫ ডিগ্রি।
ঢাকার বৈরী আবহাওয়া সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ঢাকায় বৃষ্টিপাত হলেও আশপাশের অন্তত ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা কমছে না। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে আশপাশ এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সুতরাং ঢাকার কেন্দ্রে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
চিকিত্সাবিজ্ঞানের মতে, মানবদেহ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সইতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, রোগ বা তাপ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্তমানে মানুষ ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রাও সইতে পারছে না। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে হিটস্ট্রোকে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, এই মুহূর্তে দেশের ৯ জেলায় ভয়াবহ হিটস্ট্রোক চলছে। জেলাগুলো হল-ঢাকা, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর। এসব স্থানে গতকালও গড়ে ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) শর্ট স্টে ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মানুষের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম পদার্থ বের হচ্ছে। শরীরের ভেতর বিভিন্ন পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে কর্মরত ‘থার্মাল রেগুলেশন’ কাঠামোটি কাজ করতে চাইছে না। তাই মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ও ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে হাঁটা বা কাজ করার সময় মাথা ও শরীর ঢেকে রাখতে হবে। প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। শরবত ও ওরস্যালাইনের পাশাপাশি তরমুজ, শসা বেশ উপকারী। ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়াযুক্ত স্থানে শুইয়ে দিতে হবে। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে।
হিটস্ট্রোকের উপসর্গ প্রসঙ্গে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড তাপমাত্রায় শরীরের ইলেকট্রোলাইট নামক পদার্থের তারতম্যের কারণেই মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের আগে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। বমি বমি ভাব দেখা দেবে। অচেতন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। মাথা ঘুরতে থাকবে। প্রস্রাব ও রক্তচাপ কমে যাবে। মাংসপেশিতে খিচুনি ধরতে পারে।