হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর কোনো উপসর্গ না থাকায় প্রতি ১০ জনে ৯ জনই জানেন না যে তারা এ ভাইরাসের বাহক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে সময়মতো এ রোগ ধরা না পড়লে আক্রান্তদের অনেকেরই লিভার সিরোসিস বা লিভার ফেইলিওর হতে পারে।
সংস্থাটি জানায়, ভাইরাল হেপাটাইটিস বি ও সি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বব্যাপী ৩২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এ রোগের বাহক। ভাইরাল হেপাটাইটিসই লিভারের ক্যান্সারের মূল কারণ। যে রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ১৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস বি ও সি এমন একটি ভাইরাল ইনফেকশন, যা রোগীর শরীরে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমিত হলেও কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। কখনও কখনও এক বছর বা এক দশক পর্যন্ত এ ভাইরাস শরীরের ভেতরে রোগ বিস্তার করতে পারে। বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারে আক্রান্তের ৬০ ভাগেরই প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি’র সংক্রমণ।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- হেপাটাইটিস সেবাগুলোর সর্বোত্তম চর্চা প্রদর্শন এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ উন্নীত করা। ভাইরাল হেপাটাইটিসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী একযোগে কাজ করা এবং এজন্য তহবিল গঠন।
বাংলাদেশে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের বাহক। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি লোক ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত।
তাদের বেশির ভাগই জীবনের কোনো একপর্যায়ে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে আছেন। বছরে ২৫ হাজার লোক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হেপাটাইটিস-বি রোগীরা ভাইরাসটির রিজার্ভার হিসেবে কাজ করেন। ফলে তাদের থেকে যে কোনো সুস্থ লোকের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ নতুন করে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। নারী, গর্ভবতী নারী ও নবজাতক শিশুদের বেলায় হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের সারফেস এন্টিজেন পজিটিভ হওয়ায় তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি নিজ দেশেও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত এ দেশের ১০ শতাংশ লোকের চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৯০ ভাগ মানুষ জানেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত।
এজন্য পরীক্ষা করাতে হবে এবং পরীক্ষায় যদি পজেটিভ হয় তাহলে টিকা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, শতকরা ১০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি আর প্রায় ৯০ ভাগ শিশু যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাদের লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন দেখা দেয়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যারা এইচবিএসএজি (HBsAg) পজিটিভ হিসেবে পরিচিত।
এ ধরনের রোগীদের প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না। তাই পরীক্ষা ছাড়া হেপাটাইটিস নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজ’ আজ রবিবার (২৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে সচেতনতামূলক পোস্টার প্রদর্শন, রক্তদান ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।