বাংলাদেশে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস (ন্যাশ) বা ফ্যাটি লিভার রোগে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আক্রান্ত। তন্মধ্যে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ১৮ লাখ মানুষ। সচেতনতা না বাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে এদেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।
২য় আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষে বুধবার (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ইয়ার আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, ন্যাশ প্রধানত খাদ্যাভাস বা শারীরিক শ্রম না করলে হয়। এ রোগে মানবদেহের অন্যতম অঙ্গ লিভারের চর্বি জমে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে। সঠিক সময়ে প্রতিরোধ না করলে ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা লোপ পায় যা লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় মানুষ এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, ফাস্ট ফুড নিয়ে আমেরিকান বিজ্ঞানীরা ক্ষতিকর দিক তুলে ধরছেন। ফলে কোকাকোলা ও আমেরিকান বার্গার বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে ব্যবসায় নজর দিয়েছে। এখানে কোম্পানির নিজস্ব ফ্যাক্টরি করছে। টোব্যাকোর মতো ফাস্ট ফুডের ব্যবসার ক্ষেত্রেও সরকারের কর বাড়াতে হবে।
সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ঝুঁকিতে ফেলছে। ফাস্ট ফুড ও বিরিয়ানি ফ্যাটি লিভারের অন্যতম কারণ। ফাস্ট ফুড লিভার সিরোসিসের কারণ ও স্থুলতা বাড়ায়।
সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন বলেন, জননিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। ফাস্ট ফুড, ভেজাল খাবার পরিহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ৮৮ শতাংশ ওষুধ বিক্রি হয় প্রেসক্রিপশন ছাড়া। এটা কীভাবে সম্ভব? ভেজাল খাদ্য লিভার নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। গুঁড়ো হলুদে মেটানিল ইউলো ব্যবহার করতে বিজ্ঞানীরাই শিখিয়েছেন। এজন্য এদেশের বিজ্ঞানীরা দায়ী।
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে খাদ্যের কোয়ালিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, ফলে মানুষ ফাস্ট ফুড খেয়েও অসুস্থ কম হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে উঠতি পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো ভেজাল মিশিয়ে পুঁজি করছে। রাষ্ট্র যদি শক্তভাবে মোকাবিলা না করে, তা হলে ভেজাল দূর হবে না। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সভাপতি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের পাশাপাশি মনোজগতের পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে না জানি, তাহলে কীভাবে স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। সমাজের সঙ্গে মিশতে হবে। তাহলেই স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, খাদ্যে ভেজালে আমাদের দেশে শাস্তি হয় না এটা নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশ একটা নীরব ঘাতক। এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, একটা কথা প্রচলিত আছে, উকিল চায় দেশে অপরাধ বাড়ুক, তাহলে আয় বাড়বে। তেমনি ডাক্তার চায়, অসুখ বাড়লে আয় বাড়বে। কিন্তু কিছু চিকিৎসা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ালে কমানো সম্ভব। এ রোগের সম্পূর্ণ চিকিৎসা নেই। ভেজাল ও তেলমুক্ত খাবার খেতে হবে।
ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ইয়ার লিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শহীদ জায়া শ্যামলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ ও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রমুখ।