বাংলাদেশে তামাকপণ্য বিক্রি হয় এমন দোকানগুলোতে আইন অনুসারে তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও প্রদর্শনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে না। শতভাগ বিক্রয়কেন্দ্রেই তামাকপণ্যের খালি মোড়ক সাজিয়ে আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
দোকানগুলোতে আইন অনুসারে তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও প্রদর্শনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে মেনে চলা হয় কি না তা জানতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এ জরিপ করে। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-সিটিএফকে’র কারিগরি সহযোগিতায় জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল তলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার ডা. আহমাদ খায়রুল আবরার।
জরিপে দেশের কোনো তামাকপণ্যের দোকানেই আইন শতভাগ মেনে চলতে দেখা যায়নি। দেশে তামাক বিক্রি হয় এমন দোকানগুলোর ১৮ শতাংশে তামাকপণ্যের স্টিকার, ১৪ শতাংশ দোকানে পোস্টার, ৮ শতাংশে ব্র্যান্ডিং মার্ক, ১ শতাংশ দোকানে ব্যানার দেখা গেছে। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানে তামাকপণ্যের ব্র্যান্ড সম্বলিত ডিসকাউন্ট কুপন, উপহার সামগ্রী, দোকানির গেঞ্জি ছিল, যা তামাকপণ্যের পরোক্ষ বিজ্ঞাপন। তাছাড়া আজকাল অনেক দোকানেই ‘এখানে ন্যায্যমূল্যে সিগারেট পাওয়া যায়’—এমন স্টিকার ও বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেটের দাম লিখে প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এটাও একধরনের বিজ্ঞাপন, যা আইন অনুসারে নিষিদ্ধ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর যতো মানুষ মৃত্যুবরণ করেন তার এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী হৃদরোগ। আর এই হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক সেবন। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ ছাড়াও ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রচুর মানুষ। তাই জনস্বাস্যেরদর ঝুঁকি মোকাবেলায় তামাকের বিস্তার রোধের কোনো বিকল্প নেই।
২০১৩ সালের সংশোধিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন’ অনুসারে তামাকপণ্যের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ যেকোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, প্রচারণা করলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো অধ্যাপক ড. নাসিরুদ্দিন আহমেদ। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব জনাব রুহুল কুদ্দুস এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য-২) জনাব খন্দকার জাকির হোসেন। এছাড়াও বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠনের সদস্যরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।