Connect with us

স্বাস্থ্য সংবাদ

হূদরোগে মৃত্যু বেশি : এরপর জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার অবস্থান

দেশের হাসপাতালগুলোতে হূদেরাগে (কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ) আক্রান্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা যান। এরপর মৃত্যুর কারণ নবজাতক-সংশ্লিষ্ট রোগ, বিশেষ করে জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিন ২০১০-এ এ তথ্য পাওয়া গেছে।বার্ষিক এই প্রতিবেদনে হাসপাতালে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণ তালিকা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্য কারণগুলো হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, আঘাত, হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল হওয়া, […]

Published

on

দেশের হাসপাতালগুলোতে হূদেরাগে (কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ) আক্রান্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা যান। এরপর মৃত্যুর কারণ নবজাতক-সংশ্লিষ্ট রোগ, বিশেষ করে জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিন ২০১০-এ এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বার্ষিক এই প্রতিবেদনে হাসপাতালে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণ তালিকা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্য কারণগুলো হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, আঘাত, হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল হওয়া, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ, তীব্র সংক্রমণ, অপুষ্টি ও ক্যানসার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ডিওলজি বিভাগের শিক্ষক ও হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি সরকারের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে এই তালিকা গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়। এই তালিকায় দেখা যায়, হূদেরাগ বা হূদ্যন্ত্র-সংশ্লিষ্ট রোগই মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অপুষ্টিজনিত ও সংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যু কমে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ হূদেরাগ দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দেখা দেবে।
বেসরকারি উত্তরা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পর্যায়ক্রমে সারা দেশের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল কর্মকর্তাদের পক্ষকালব্যাপী হূদেরাগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
দেশের ৩৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫২টি জেলা হাসপাতাল, দুটি জেনারেল হাসপাতাল ও ১১টি মেডিকেল কলেজ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এসব হাসপাতালে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—এই ১২ মাসের ৩৫ হাজার ৬৩৬টি মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে এই তালিকা করা হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হাসপাতালগুলো থেকে প্রতিটি মৃত্যু সম্পর্কে যে কারণ বর্ণনা করা হয়েছে, তাকেই ভিত্তি ধরে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৭, ২২ দশমিক ৮, ১৬ ও ২১ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হূদেরাগ। এরপর নবজাতক-সংশ্লিষ্ট রোগে মৃত্যুর হার যথাক্রমে ৪ দশমিক ৩, ১৪ দশমিক ৭, ২ দশমিক ৬ ও ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
উপজেলা হাসপাতাল: ছয় হাজার ৬৭৩টি মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে, উপজেলা হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ায়, ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। প্রতিবেদনে বয়সের যে বিভাজন করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় যে শূন্য থেকে ২৮ দিন বয়সীরা সবচেয়ে বেশি মারা যায় (২৮.৮৩) জন্মকালীন শ্বাসকষ্টে। অন্যদিকে ২৯ দিন থেকে ১১ মাস, এক থেকে চার বছর এবং পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।
অন্যদিকে উপজেলা হাসপাতালে ১৫ থেকে ২৪ বয়সসীমায় সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যায় বিষক্রিয়ায় (২৪.৮৯)। পুরুষের (২২.২২) চেয়ে নারীর (২৬.৮২) মধ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর হার বেশি। ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যেও বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর হার বেশি।
৫০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা হাসপাতালে মারা যান হাঁপানি (১৪.৩৪), হূদেরাগ (১৪.২৩), হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল (৯.৮৫) হওয়ার কারণে।
জেলা হাসপাতাল: গত এক বছরে ৫২টি জেলা হাসপাতালে ১৪ হাজার ৯০৫টি মৃত্যুর তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, জেলা হাসপাতালে জন্মকালীন শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৬৭৮ (১১.৩২)। জেলা হাসপাতালে এটাই তালিকার শীর্ষে।
জেলা হাসপাতালগুলোর তথ্য থেকে জানা যায়, নবজাতক (শূন্য থেকে ২৮ দিন বয়স) সবচেয়ে বেশি মারা যায় জন্মকালীন শ্বাসকষ্টে। নবজাতকের মৃত্যুর অন্য কারণ ওজন কম হওয়া ও নিউমোনিয়া।
জেলা হাসপাতালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়া (৩১.৩৪)।
২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সসীমায় হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল হয়ে জেলা হাসপাতালে মানুষ বেশি মারা যায় (১১.১২)। এর পরের কারণটি হূদেরাগ (৮.৯৬)। দুটি ক্ষেত্রেই মৃত্যু হার পুরুষের তুলনায় নারীর বেশি।
পঞ্চাশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে হূদেরাগে (২১.৭৭)। এর পরের কারণটি হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল হওয়া (১১.২৩)। নারীরা একই বয়সসীমার পুরুষের তুলনায় বেশি হূদেরাগের ঝুঁকিতে আছেন।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩ হাজার ৯০২টি মৃত্যুর তথ্য প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সব বয়সীদের মৃত্যুর কারণের তালিকায় শীর্ষে আছে হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল হওয়া (৯.৭৪)।
শূন্য থেকে ২৮ দিন বয়সী মেয়েশিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট (৩০.১৮)। একই বয়সী ছেলেশিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ কম ওজন (২৯.৯২)। এই বয়সীদের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। তবে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার মেয়েশিশুদের বেশি। ২৯ দিন থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণও নিউমোনিয়া।
সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী যত মানুষ মারা যান, তাঁদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুস বিকল হওয়া। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীর মৃত্যুর প্রধান কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (সেরিব্রো-ভাসকুলার অ্যাক্সিডেন্ট)। একই বয়সী পুরুষের মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক (একুইট মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, জন্মের প্রথম এক মিনিটের মধ্যে নবজাতককে নিজ থেকে শ্বাস নিতে হয়। শ্বাস না নিলে নবজাতকের শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে থাকে। শ্বাস নিলেই নবজাতক কেঁদে ওঠে। শ্বাস নিতে দেরি হলে তার মস্তিষ্ক, হূৎপিণ্ড, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেরিতে শ্বাস নেওয়া শিশুদের অনেকেই পরে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। মা অপুষ্টির শিকার হলে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অথবা গর্ভাবস্থায় শিশুর অন্য কোনো সমস্যা হলে জন্মের সময় অ্যাসপেকশিয়া দেখা দিতে পারে। মাকে গর্ভকালে নিয়মিত পরীক্ষা করানো এবং মায়ের অপুষ্টি দূর করা প্রতিরোধের একটি পথ। অন্য পথটি হচ্ছে জন্মের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা নেওয়া। এসব দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী জন্মের সময় নবজাতককে কাঁদতে বা শ্বাস নিতে সহায়তা করতে পারেন।
সুত্র: প্রথম আলো

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন4 weeks ago

ওষুধ খাওয়ার ভুলে অসুস্থতা

জ্বর বা মাথাব্যথা হলেই প্যারাসিটামল, অ্যালার্জির জন্য হিস্টাসিন কিংবা গ্যাসের ট্যাবলেট- এই ধরনের ওষুধগুলো আমরা হরহামেশাই খাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই।...

খাদ্য ও পুষ্টি1 month ago

শিশুদের জন্য লবণ যতটুকু দরকার

অতিরিক্ত লবণ শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা প্রদানের পাশাপাশি অল্প বয়সে রক্তচাপের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিমাণ লবণ রাখতে হবে যা...

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন1 month ago

ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কেন

বয়সে টিংকু বেশ ছোট। এত ছোট যে মাঝেমধ্যে টিংকুর দাঁত পড়ে। একবার বিড়াল টিংকুকে আঁচড়ে দিল। চিকিৎসক বললেন যে র‌্যাবিসের...

Advertisement