আবু জাফর সাবু
গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও পলাশবাড়ী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কতিপয় মানুষ ঔষধি গাছের চাষ করে তাদের ভাগ্যে পরিবর্তন এনেছেন। এ থেকে ঔষুধি গাছ চাষের ক্ষেত্রে তারা এখন অনুকরণীয় হয়ে আছেন।
জেলায় দুটি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতেই বাসক, অর্শ্বগন্ধা, কালোমেঘ, তুলসী এবং চৈ-এর চাষ হচ্ছে। এসব উৎপাদিত ঔষধি পণ্য
বাজারজাতের কোনো সমস্যা নেই। ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির প্রতিনিধি বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যায় এসব ঔষধি পণ্য। ফলে লাভজনক ওই ঔষধি গাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা। এ জন্য তাদের কৃষি জমি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। বসতবাড়ির চারপাশে, পুকুরপাড়ে, বাঁশের ঝাড়ে, পতিত জমিতে এবং রাস্তার ধারে এসবের আবাদ করা হয়।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি সংস্থা ‘উদ্যোগ’ এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়। এ জন্য প্রথমে তারা সদর উপজেলার আদর্শ ইউনিয়ন সাহাপাড়ার ভবানীপুর গ্রামে কাজ শুরু করে। ২০০৭ সালে ওই গ্রামের ৪০টি পরিবারকে নিয়ে দল গঠন করে তারা। ঔষধি বৃ সম্পর্কে তাদের ধারণা প্রদানসহ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিণ দেওয়া হয়। ভবানীপুর গ্রামে এখন বাড়ি বাড়ি এই ঔষধি বৃরে চাষ হচ্ছে। তাছাড়া ওই গ্রামের এমন কোনো রাস্তা নেই যার দুধারে বাসক গাছ লাগানো নেই। দলভিত্তিক এলাকা নিয়ে এসব ঔষধি গাছের চাষ করছে তারা। শুধু ভবানীপুরেই নয়, ওই ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, সাতানি সাদেকপুর, শিবপুর, ফলিমারী, খামার পীরগাছাসহ ১৩টি গ্রামে এসব গাছের আবাদ হচ্ছে। ওই ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার এখন এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। আর তাদের এই সাফল্যের জোয়ার ধাক্কা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী বল্লামঝাড় ইউনিয়ন এবং পলাশবাড়ী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে। বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কোমরপুর, ইসলামপুর, টেংগরজানি ও খামার রঘুনাথপুর এবং পলাশবাড়ীর বেতকাপা ইউনিয়নের মুরারীপুর, মোস্তফাপুর, খামার নড়াইল, রাইতি নড়াইল, নান্দিশহর, ডাকেরপাড়া, পার আমলাগাছি, সরকারপাড়া, মহদীপুর ইউনিয়নের কেত্তারপাড়া, বুজরুক বিষ্ণুপুর, মহদীপুর ও গোয়ালপাড়া এবং হোসেনপুর ইউনিয়নের আটঘড়িয়া, হাঁসবাড়ী, মধ্য রামচন্দ্রপুর, জগন্নাথপুর, রামকৃষ্ণপুর ও চেরেঙ্গা ইতিমধ্যে ঔষধি গ্রাম হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। বেতকাপা ইউনিয়নের রাইতি নড়াইল গ্রামের যুব উন্নয়ন স্পোর্টিং কাব এবং আশার প্রদীপ কাব ৭ কিমি এলাকায় বাসক গাছের চাষ করেছে। এ দুটি উপজেলায় বর্তমানে ২ হাজার ১০২ পরিবার ঔষধি বৃ চাষের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। আর্থিকভাবেই যথেষ্ট লাভবান হচ্ছে ওইসব পরিবার।
বেসরকারি সংস্থা উদ্যোগ-এর নির্বাহী প্রধান জিল্লুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার পলাশবাড়ী ও সদর উপজেলায় ২০ কিমি সড়ক, ২৩০ শতক বসতবাড়ী, ৫০ শতক পুকুর পাড় এবং ১৪৩ শতক আবাদি জমিতে বিভিন্ন ঔষধি বৃরে চাষ করা হচ্ছে। তিনি জানান, ঔষধ কোম্পানি এক্মি ল্যাবরেটরিজ এসব ঔষধি উপকরণ কিনে নিচ্ছে। তিনি জানান, গোটা জেলায় ঔষধি বৃক্ষ চাষ সম্প্রসারণের ল্য রয়েছে তাদের।
বর্তমানে প্রতিকেজি বাসক পাতা ৩২ টাকা, অর্শ্বগন্ধার মূল ৩শ টাকা, বীজ আড়াই হাজার টাকা, কালোমেঘ (সম্পূর্ণ গাছ) ৫০ টাকা, তুলসী (সম্পূর্ণ গাছ) ৩০ টাকা এবং চৈ-এর কা- ১শ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব ঔষধি উপকরণ বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট চাষিদের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। সাহাপাড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের আজল হোসেন ও আবু হানিফা তাদের ১শ ২০ শতক জমিতে অর্শ্বগন্ধা চাষ করে ব্যয় বাদে ৭৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। ওই গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, রাস্তার ধারে বাসক গাছের আবাদ করে তার বাড়তি আয় দিয়ে তিনি দুটি ছাগল কিনেছেন। অপরদিকে পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের রাইতি নড়াইল যুব উন্নয়ন স্পোর্টিং কাবের জহুরুল ইসলাম জানান, রাস্তার ধারে বাসক গাছ লাগিয়ে তাদের কাবের যে আয় হচ্ছে তা কাবের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে।