কোথায় থাকে এই টনসিল?
জিভের পেছনে গলার দেয়ালের দু’পাশে গোলাকার পিণ্ডের মতো যে জিনিসটি দেখা যায় সেটাই টনসিল। জন্ম থেকেই গলার মধ্যে এই টনসিল থাকে। ছোটবেলায এ টনসিল আকারে বড় হতে থাকে। ৫-৬ বছর বয়সের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি বড় আকৃতিতে পৌঁছায়, এরপর থেকে টনসিল ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে। মুখগহ্বরের দু’পাশে দু’টি টনসিল পুলিশের মতো পাহারায় থাকে বলে এটিকে মুখগহ্বরের পুলিশ বলা হয়। মুখ, গলা, নাক কিংবা সাইনাস হয়ে রোগজীবাণু অন্ত্রে বা পেটে ঢুকতে বাধা দেয় এই টনসিল। টনসিল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। কিন্*ু এই টনসিল যখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সেটির চিকিত্সা করাতে হয়, প্রয়োজনবোধে অপারেশন করে ফেলেও দিতে হয়। অপারেশন করে টনসিল ফেলে দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না, কারণ কোনো ন* জিনিস শরীরে না রাখাই ভালো। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য শরীরে আরও অনেক বড় বড় অঙ্গ রয়েছে, তারা এ কাজটি করে দেবে। আর বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে টনসিলের বিশেষ কোনো কাজ থাকে না।
টনসিলের ইনফেকশন কী?
সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণে টনসিলের প্রদাহ হয়ে থাকে। বিশেষ করে সর্দি-কাশির জন্য দায়ী ভাইরাসগুলোই এ কাজটি করে থাকে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিশেষ করে স্ট্রেপটোকক্কাস গোত্রের ব্যাকটেরিয়া টনসিলের প্রদাহ সৃ*ি করে থাকে। যে কোনো বয়সেই টনসিলের ইনফেকশন বা টনসিলাইটিস হতে পারে। শৈশবে এটা বেশি দেখা যায়, তবে বয়স্কদের বেলায়ও এটি হয়ে থাকে।
উপসর্গগুলো
টনসিলের ইনফেকশন হলে মূলত গলাব্যথা হবে, গিলতে অসুবিধা হবে। শরীরে সামান্য জ্বর থাকবে। অনেক সময় গলার স্বর পরিবর্তিত হয়, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ থাকে। সঙ্গে শিশুর খাবার গ্রহণে অনীহা কিংবা নাক দিয়ে পানি ঝড়া ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে গলার বাইরে গ্রন্থি ফুলে যেতেও দেখা যায়। ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিসে টনসিলের প্রদাহ ধীরে ধীরে বাড়ে, ফলে উপসর্গগুলোও ধীরে ধীরে আবির্ভূত হয়। অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিস হঠাত্ করেই তীব্রভাবে আক্রমণ করে, ফলে উপসর্গ গলাব্যথা হঠাত্ করেই দেখা দেয়।
রোগ নির্ণয়
প্রদাহের কারণে টনসিল বড় ও লালাভ হয়ে থাকে। টনসিলের ওপর হলুদাভ বা ধূসর আবরণে টনসিল আংশিকভাবে আবৃত থাকে। টনসিলাইটিস নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞের এ পর্যবেক্ষণই যথে*। তবে টনসিলের দেয়াল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা কালচার করেও রোগজীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।
চিকিত্সা
টনসিলের চিকিত্সা নির্ভর করে কারণের ওপর। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে তাহলে রোগীকে যথাযথ এন্টিবায়োটিক দিতে হয়। ভাইরাসের জন্য হলে ৫/৭ দিনের মধ্যেই সেরে যায়, সেক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিত্সা করা হয়। চিকিত্সার পর উপসর্গ চলে গেলেও টনসিলের আকৃতি ছোট হতে কিছুটা সময় নেয়। কয়েক মাস পর্যন্* টনসিল বাড়তি আকৃতিতে থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধে না সারলে সেক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা ও আক্রমণের হার বিবেচনা করে অপারেশনের সিদ্ধান্* নেয়া হয়।
ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক
নাক-কান-গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল