শরীরে ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে কোলন ক্যানসার সারানোর উপায়ের কথা বললেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। তারা ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলার পথ দেখিয়েছেন। সেই প্রতিরোধী ব্যবস্থাই মেরে ফেলতে পারছে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলো এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ছে না।
‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটউট অব সায়েন্স এড়ুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইসার)’ তিরুপতি শাখার ১৫ জন বিজ্ঞানীর একটি দল উদ্ভাবন করেছেন কোলন ক্যানসার সারানোর অভিনব পদ্ধতি। যার নাম- ‘প্রোবায়োটিক থেরাপি’। আমেরিকার বস্টনে সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড মেশিন (আইজেম) গ্লোবাল কম্পিটিশন’-এ স্বর্ণপদক জিতেছে এই আবিষ্কার।
প্রতি বছর বিশ্বে কোলন ক্যানসারে মৃত্যু হয় গড়ে প্রায় ৬ লাখ মানুষের। ক্যানসারে মোট মৃত্যুর ৮ শতাংশের জন্যই দায়ী কোলন ক্যানসার। ভারতে বছরে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাড়ে চারজন পুরুষ আক্রান্ত হন কোলন ক্যানসারে।
অন্যতম গবেষক ভবেশ কুমার ত্রিপাঠি বলেছেন, ‘বিশেষ একটি ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে ল্যাকটেট জাতীয় একটি রাসায়নিক যৌগকে শরীরে ঢুকিয়ে দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তুলতে পেরেছি আমরা। সেই প্রতিরোধী ব্যবস্থাই ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেলছে। তাদের দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তেও দিচ্ছে না।’
‘প্রোবায়োটিক থেরাপি’ কী?
গবেষক দলের সদস্য মেঘা মারিয়া জ্যাকবের কথায়, ‘সব ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের মতো কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোকেও আলাদাভাবে চেনা যায়। এগুলোকে বলা হয় ‘স্পেশাল মার্কার’। আমরা এমন ব্যাকটেরিয়া বেছেছি, যা কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের স্পেশাল মার্কার চিনতে পারে। আর সেই কোষগুলো যাতে দেহের অন্য অংশে ছড়িয়ে না পড়তে পারে, সেজন্য তাদের বেঁধে ফেলতে পারে। এটাকেই বলা হয় ‘প্রোবায়োটিক থেরাপি।’
ক্যানসার কোষগুলোতে ল্যাকটেট থাকে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে। তাই যে ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে ঢুকিয়েছেন গবেষকরা, তারও শরীরে পুরে দেয়া হয়েছে ল্যাকটেট, প্রচুর পরিমাণে। ল্যাকটেট দেখে ক্যানসার কোষগুলো আকৃষ্ট হতেই ব্যাকটেরিয়ার শরীর থেকে বেরিয়ে আসে একটি রাসায়নিক যৌগ। যার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থা। তারপর সেই প্রতিরোধী ব্যবস্থাই মেরে ফেলে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোকে।