‘আদাজল খেয়ে লাগা’ বলে একটা প্রবাদ আছে বাংলা ভাষায়। আদার সমৃদ্ধ খাদ্যমানের কারণেই বিজ্ঞজনেরা এই প্রবাদ প্রচলন করেছিলেন, সন্দেহ নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যতালিকায় আদা একটি অত্যাবশ্যকীয় নাম।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আদা থাকলে যেকোনো ধরনের ঠান্ডাসংক্রান্ত রোগবালাই ও হাঁপানির আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাকস্থলীর অনেক সমস্যা থেকেও রেহাই মেলে আদা সেবনে। এ ছাড়া সকালে উঠলে অনেকেরই শরীর ম্যাজম্যাজ করে, কিংবা দুর্বল বোধ করেন। এ ক্ষেত্রেও আদা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে আদা। এ ছাড়া চুল পড়া রোধেও তা বেশ কাজে দেয়। ভিটামিন ‘ই’, ‘এ’, ‘বি৬’ এবং ‘সি’র পরিমাণও কম নয় আদার মধ্যে। এ ছাড়া রক্তের প্লাটিলেট ও কার্ডিওভাসকুলার কার্যক্রম ঠিক রাখতেও তা দারুণ কার্যকর।
আপনার হাতের কাছেই আছে মহৌষধ। কাঁচা আদা। একটুকরো কাঁচা আদাই হাজারো রোগ-ব্যাধির যম। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আদা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি, কাশি, খাওয়ার ইচ্ছে নেই? হাত-পায়ের জয়েন্টে ব্যথা? বমি বমি ভাব বা মাথা ঘুরছে? হাতের কাছেই চটজলদি সমাধান। একটুকরো কাঁচা আদাই হাজারো রোগব্যাধির যম।
১০০ গ্রাম আদায় রয়েছে ৮০ ক্যালরি এনার্জি, কার্বোহাইড্রেট ১৭ গ্রাম, ফ্যাট ০.৭৫ গ্রাম, পটাসিয়াম ৪১৫ মিলিগ্রাম এবং ৩৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
আদার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরের রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদাই বেশি উপকারি। খাবার দেখলেই অসুস্থ বোধ করছেন? খাওয়ার আগে ১ চা চামচ আদা খেলেই ফেরে মুখের রুচি।
খানিকটা অলিভ অয়েলে আদা ছেঁচে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করে হাত-পায়ের জয়েন্টে মালিশ করলেই ব্যথা উধাও। প্রতিদিন ১ ইঞ্চি আদা কুচি খাওয়ার অভ্যাস সাইনাস প্রতিরোধ করে। সিজন চেঞ্জের সময় অ্যাজমা, মাইগ্রেনের সমস্যা ভোগায়। এই সময় ডায়েটে আদা রাখলে সমস্যার চটজলদি সমাধান।
আর্টারি ওয়ালে ব্যাড কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি অ্যাসিড জমে করোনারি হার্ট ডিজিজের সমস্যা হয়। ফলে রক্ত চলাচলে অসুবিধে হয়। আদা রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। লিভার ও রক্তে ব্যাড কোলেস্টেরল জমা আটকায়। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
অতিরিক্ত মেদ ঝরায় আদা। ডায়াবেটিস জনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আদা ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা উপকারি। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ত্বকে পড়ছে বয়সের ছাপ? প্রতিদিন সামান্য কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে হবে। আদায় রয়েছে অ্যান্টিএইজিং উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের টক্সিন দূর করে ও রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে।
আদা খাওয়া উপকারি হলেও কিছু কিছু সময় অত্যন্ত উপকারি এই খাবারই হয়ে উঠতে পারে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। জেনে নিন কোন কোন ক্ষেত্রে আদা ক্ষতিকারক হতে পারে।
যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ওষুধ খান, তাদের ডায়েট চার্ট থেকে চিরতরে ডিলিট করে দিতে হবে আদা। একই কথা প্রযোজ্য উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রেও।
অন্তঃসত্ত্বাদের এড়িয়ে চলতে হবে আদা। বিশেষ করে প্রেগনেন্সির শেষ সপ্তাহগুলিতে আদা খাওয়া কখনই উচিত নয়। প্রিম্যাচিওর শিশু জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পিত্তথলিতে পাথর থাকলে বা খাদ্যনালিতে ঘা হলে আদা খাওয়া চলবে না।