আগামী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত বছরের তুলনায় বাড়লেও এটা স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
আজ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। তবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পুরো বক্তব্য দিতে পারেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন করেন।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিলো ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম ১২টি মন্ত্রনালয়/বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.০২ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৫.৬৩ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘গত বছর বরাদ্দ ছিলো মোট বাজেটের ৫.০৩ শতাংশ। এবছর তা বেড়ে ৫.৬৩ শতাংশ হয়েছে। এজন্য সরকারকে সাধুবাদা জানাই। তবে এটা পর্যাপ্ত নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাব হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা। আমরা ১৫ শতাংশ দাবি করছি না। আমরা অন্তত মোট বাজেটের ১০ শতাংশ দাবি করে আসছি। সেই তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা অপ্রতুল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বাজেট তো কম। তারপরে দুর্নীতির একটা বিষয় রয়েছে। সেইভাবে মনিটরিং করা হয় না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনবল অপ্রতুল রয়েছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত মোট চিকিৎসক রয়েছেন ২১৮০০ জন। এর মধ্যে ২০ শতাংশই প্রশাসনে। বাকি রইলো ৮০ শতাংশ। এরমধ্যে মেডিক্যাল অফিসার ৫০ শতাংশ।
আমরা যে কথাটা বলে আসছি- সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা। আমরা যদি সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চাই তাহলে অবশ্য আমাদের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেই সাথে তার যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট ছিলো ২৩ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় জানানো হয়, চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড ওয়ার্ড নির্মাণ, ওয়ান পয়েন্ট চেক আপ সেন্টার, সন্ধ্যাকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও ক্যান্সার ভবন নির্মাণ করা হবে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশ্বমানের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট উইনিট এবং সাধারণ রোগীদের সেবার পরিধি বাড়াতে দুটি ভবন সম্প্রসারণ করা হবে।
এছাড়া বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি আইন প্রনয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইন এবং বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল শিক্ষা বোর্ড আইন প্রনয়নের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নাগরিকের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জন্য চিকিৎসা ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। তারা যেসব কর্ম সম্পাদনে পারদর্শী ও সক্ষম সে কাজে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মক্ষম করে তোলা হবে। নার্সিং শিক্ষা সম্প্রসারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩টি নার্সিং কলেজ এবং ৫টি নার্সিং বয়েজ হোস্টেল স্থাপন করা হবে।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব মো. ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘এটা একটি মহৎ উদ্যোগ। নার্সিং কলেজ স্থাপনে এ সেক্টরে শিক্ষার পরিধি বাড়বে। হোস্টেল স্থাপনও প্রয়োজন ছিলো। এতে আমরা উপকৃত হবো। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’
বাজেট বক্তৃতায় আরো জানানো হয়, চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়নে দেশের সকল বিভাগে পর্যায়ক্রমে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০০৬ সালের ৪৬টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে বর্তমানে ১১১টিতে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে এমবিবিএস কোর্সের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগামী অর্থবছরে দেশের ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউরো মেডিসিন অন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সস (ইনসাম) স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ৬টি ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। ইনস্টিটিউট অব ইলেস্ট্রনিকসের গবেষণাগারে সুবিধা উন্নয়ন ও এর আধুনিকায়ন এবং রেডিওথেরাপি, ডায়াগনস্টিক রেডিওলজি, নিউট্রন ক্রমাঙ্কন ও মান নিয়ন্ত্রনে স্ট্যান্ডার্ড গবেষণাগার স্থাপন করা হবে।